দাভোলকরের শাহাদাত দিবস

আজ ২০শে অগাস্ট সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবস এবং একই দিনে আজ থেকে ৮ বছর আগে ২০১৩ সালে উগ্র-হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর হাতে খুন হন জাতপাত, কুসংস্কার বিরোধী বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মী, চিকিৎসক, যুক্তিবাদী লেখক ও সমাজসেবী নরেন্দ্র দাভোলকর। 

কে ছিলেন নরেন্দ্র দাভোলকর ? 

১৯৪৫ সালের ১লা নভেম্বর মহারাষ্ট্রের একটি ছোট্ট শহর সাতারাতে জন্মগ্রহণ করেন দশ ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠতম নরেন্দ্র অচ্যুত দাভোলকার। নিউ ইংলিশ স্কুল এবং উইলিংডন কলেজ থেকে শিক্ষালাভের পর তিনি মিরাজের সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। 

শুধু লেখাপড়াই নয় খেলাধুলাতেও প্রথম সারিতেই ছিল তাঁর নাম। শিবাজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবাডি টিমের ক্যাপ্টেন দাভোলকার ভারতের হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কবাডি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে 'shiv chatrapati Yuva award-এ ভূষিত হয়েছিলেন। 
     
১২ বছর ডাক্তারির পর ১৯৮০ সালে তিনি আরো নিবিড় ভাবে সমাজসেবায় নিযুক্ত হন। তিনি ডঃ বাবা আদ্ভব-এর 'এক গাঁও এক পানোথা' (One village one well) উদ্যোগের সাথে যুক্ত ছিলেন। কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনে মনোনিবেশ করেন এবং 'অখিল ভারতীয় অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি'-র সাথে যুক্ত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি 'মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি' (MANS) প্রতিষ্ঠা করেন এবং সমাজে চলমান অন্ধবিশ্বাস, গুরুজি-বাবাজীদের চমৎকার প্রভৃতির বিরুদ্ধে বিজ্ঞানসম্মত প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন এবং ব্যাপক জনমত গড়ে তোলেন। পঁচিশ বছরে মহারাষ্ট্র জুড়ে ২২৫ টি কেন্দ্র চালু করেছেন তিনি। 
         
দাভোলকর মহারাষ্ট্রের সাতারা অঞ্চলে মদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। 'পরিবর্তন' নামক একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। বর্তমানে তাঁর পুত্র সাইকোলজিস্ট হামিদ এই কেন্দ্রটির সাথে যুক্ত রয়েছেন। মারাঠা পাক্ষিক 'সাধনা'র সম্পাদনাও করেছেন দাভোলকর।
    
১৯৯০-২০১০ এই সময়কালে দাভোলকর ভারতবর্ষের সামন্ততান্ত্রিক শোষণের প্রধান কাঠামো জাত ব্যাবস্থা এবং অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে তীব্র সোচ্চার হন। দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি সাম্যের অধিকার, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, ভারতের ধর্মীয় ব্যবস্থা ও ধর্মীয় দাঙ্গা প্রতিহত ইত্যাদির ব্যাপারে আরো সক্রিয় হয়ে ওঠেন। মূলত তাঁর প্রচেষ্টাতেই  Marathwada University-র নাম পরবর্তীতে Dr. B.R.Ambedkar এর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর নেতৃত্বেই কুসংস্কার এবং কালো জাদু বিরোধী বিল পাশের আন্দোলন চালাচ্ছিলো MANS। এর বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলি (শিবসেনা, বিজেপির মত) অবস্থান নেয় এবং দাভোলকরের এই উদ্যোগগুলির নানাভাবে বিরোধিতা করে। বিভিন্ন সময় খুনের হুমকিও পেয়েছিলেন কিন্তু তা সত্বেও তিনি দমেননি, লড়াই চালিয়ে যান। শেষপর্যন্ত যখন বিলটি আইনসভায় পাশ হয়, সেইদিন আর দেখে যেতে পারেননি দাভোলকর। 
    
২০শে অগাস্ট, ২০১৩ মঙ্গলবার, প্রতিদিনের মত প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি। তখনই কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতি তাঁকে গুলি করে। ওমকারেশ্বর ব্রিজের ধারে পড়ে থাকে তাঁর রক্তাক্ত দেহ। কুসংস্কার, জাতপাত, অন্ধবিশ্বাস, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে নিজের জীবন দিয়ে সমাজকে এক প্রগতিশীল, সাম্যবাদী লক্ষে নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা, যে লড়াই তিনি আজীবন করেছেন তা আজও জারি আছে। 

Post a Comment

1 Comments

Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)