গত কয়েক মাসে ম্যানহোল, সেপ্টিক ট্যাঙ্কে একাধিক শ্রমিকের মৃত্যু, নির্বিকার প্রশাসন


মেহনতি ডিজিটাল ডেস্কঃ জাকির শেখ (৩২), শেখ আলামিন (২৫), সাবির শেখ (৩৫)। এনারা কেউ 'জেএমবি সন্ত্রাসী' নয়, বর্তমান মিডিয়া যখন বাংলা জুড়ে মুসলিম নামধারী সন্ত্রাসবাদী খুঁজতে ব্যস্ত সেই সময় এই তিন যুবক বীরভূমের নলহাটি থানা এলাকার নোয়াপাড়া গ্রাম থেকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন হাওড়ার জয়পুর এলাকার ঝামটিয়ার ধরমপোতা অঞ্চলে। একটি নির্মীয়মান বহুতলের সেপ্টিক ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হয় প্রত্যেকের। খুব স্বাভাবিক ভাবেই মিডিয়া এই তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে বিন্দুমাত্র সরব নয়, সরব নয় নেট দুনিয়ার প্রতিবাদীরা। বহুতলের মালিক, ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে, শ্রমিকদের সুরক্ষার কথা না ভেবে আইন উলঙ্ঘন করে এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নামানো প্রত্যেক দোষীদের শাস্তি, মৃত তিন শ্রমিকের পরিবারের ক্ষতিপূরণ নিয়ে নির্বিকার প্রশাসন। 

জাকির শেখের পরিবারে একমাত্র রোজগেড়ে ছিলেন তিনি। দুই যমজ ছোট সন্তান আরমান, রহমান, স্ত্রী দুলালী খাতুন ও পঙ্গু দাদাকে নিয়ে ছিল অভাবের সংসার। ওনার মৃত্যুর পর পরিবারের অবস্থা মারাত্মক শোচনীয়। টিঙ্কু শেখ জানাচ্ছেন এভাবে চললে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই পরিবারের। আলামিন শেখের ছোট দুই মেয়ে, জিনিয়া আর আনিশা। স্ত্রী জারিকা খাতুন স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকে বারেবারে সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। সাবির শেখের দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়ে সাবিনা ক্লাস টুয়েল্ভ, ছোট মেয়ে সাবনুর ক্লাস এইট, ছেলে আলিফ ক্লাস সিক্সে পড়ে। মৃত তিন শ্রমিকই ছিল বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী। 

মাস চারেক আগেই কলকাতার রিজেন্ট পার্ক থানার অধীন কুঁদঘাট এলাকায় ম্যানহোলে নেমে বর্জ্য পরিষ্কার করতে গিয়ে সাবির হোসেন(১৯), লিয়াকত আলি(২০), জাহাঙ্গীর আলম এবং মহম্মদ আলমগীর(৩৫); ৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গুরুতর অসুস্থ হন আরো তিনজন। এই ঘটনা নতুন নয়, এই রাজ্যে তো বটেই গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এইভাবেই প্রতিদিন ঘটে চলেছে শয়ে শয়ে দলিত, সংখ্যালঘু শ্রমিকদের খুন, নিছক দুর্ঘটনার নামে চাপা দেওয়া হচ্ছে সে খবর। 'এসকেএ' তথ্যমতে শুধুমাত্র ম্যানহোলেই প্রতিবছর ২০০০ শ্রমিক বিষাক্ত গ্যাসে প্রাণ হারান। Prohibition of Employment as Manual Scavengers and their Rehabilitation Rules ২০১৩ এর রুল ৩, বলা আছে, 'no person shall be permitted to clean sewers manually, with protective gear and safety devices, except under four circumstances.' এই চার এক্সেপশনাল সারকামস্টানসেস এর ক্ষেত্রেও বলা আছে লোকাল অথরিটির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের উপযুক্ত কারণ সহ লিখিত অনুমতি থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে আমাদের রাজ্যে এসব কোনো কিছুরই বালাই নেই। নেই লাগাতার শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার প্রশ্নগুলো তোলা, ম্যানহোল - সেপ্টিক ট্যাঙ্কে নেমে বজ্র পরিস্কার করার মত ঝুঁকিপূর্ণ, অমানবিক, বর্ণবাদী, অসাংবিধানিক কাজ বাতিল করার দাবি তোলার মত শক্তিশালী প্রতিবাদ। আর সেই সুযোগেই বারবার ছাড় পেয়ে গেছে, ছাড় পেয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার থেকে মালিক শ্রেণী, ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতা আমলারা। 

Manual scavenging is most inhuman and it infringes the fundamental rights (Right of a citizen to live with dignity) guaranteed under Article 21.

Post a Comment

0 Comments