মেহনতি ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের শিক্ষাদপ্তরের সামনে বিষ খেয়ে ৫ শিক্ষিকার আত্মহত্যার চেষ্টার সেই ভিডিও দেখে ইতিমধ্যে শিউরে উঠেছেন রাজ্যের মানুষ। বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে, চাকরির স্থায়ীকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে SSK, MSK-এর শিক্ষক শিক্ষিকারা শিক্ষাদপ্তরে একাধিকবার চিঠি, ডেপুটেশন দেওয়া থেকে অবস্থান বিক্ষোভের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শুধুমাত্র সেই কারণে প্রতিহিংসা মূলক ভাবে আন্দোলনকারী ১৭ জন শিক্ষক শিক্ষিকাকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে বদলি করা হয়। স্বল্প মাইনেতে দূরদূরান্তে এই অনৈতিক বদলির বিরুদ্ধে বারংবার আর্জি জানিয়েও মেলেনি সুরাহা। হাইকোর্টে এই ব্যাপারে মামলা করতে গেলে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করে করা হয় হেনস্থা। অবশেষে উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে শিক্ষাদপ্তরের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৫ শিক্ষিকা, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা এইমুহূর্তে আশঙ্কাজনক।
অন্যদিকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই একের পর এক শিক্ষাবিরোধী এবং বিশ্বভারতীর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিরোধী নীতি প্রণয়নের চেষ্টা করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিশ্বভারতীর সংস্কৃতিকে ধীরে ধীরে গৈরিকিকরণের দিকে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে সরব ছিলেন ওখানকার বেশকিছু ছাত্র ছাত্রীর পাশাপাশি শিক্ষকরাও। আর তাতেই তাদের রোষানলে পড়তে হয় উপাচার্যের। ক্যাম্পাসে ঝামেলা সৃষ্টি, হিংসার মিথ্যে অভিযোগ এনে তিন শিক্ষার্থী ফাল্গুনী পান, সোমনাথ সৌ ও রুপা চক্রবর্তীকে প্রথমে নয়'মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ তাদের বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি সাসপেন্ড করা হয় দুই শিক্ষককেও। উপাচার্যের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসএফআই, আইসা, পিডিএসএফ সহ একাধিক বাম শিক্ষার্থী সংগঠন। উপাচার্যকে বিজেপির দালাল বলে সম্বোধন করে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন বহু গণসংগঠন। ইতিমধ্যেই একাধিক সংগঠন এর প্রতিবাদে মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে। আজ বিশ্বভারতীর মূল সেন্ট্রাল অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা। বিক্ষোভ তুলতে গেলে হাতাহাতি বাধে বিশ্বভারতী নিরাপত্তাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। এইমুহূর্তে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আছেন ছাত্রছাত্রীরা।
রাজ্যে আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপর নামিয়ে আনা নিপীড়ন এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের নির্দেশে তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও দুই শিক্ষককে সাসপেন্ডের বিরুদ্ধে আজ এপিডিআর-এর উদ্যোগে কলেজস্ট্রিটে নেওয়া হয় একটি প্রতিবাদ সভা। সভায় এপিডিআর এর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শংকর বিশ্বাস, নিশা বিশ্বাস, আলতাফ আমেদ, তাপস চক্রবর্তী, জগদীশ সর্দার, সঞ্জীব আচার্য সহ আরো অনেকে। সভায় উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্যরাও। তাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন অসীমা সরকার, নাজিবুল হক, নন্দদুলাল দাস প্রমুখ। সভা থেকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি বহিষ্কৃত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নামে সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। দাবি জানানো হয় অবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে আলোচনার মধ্যে দিয়ে বেতন বৈষম্য দূর করে চাকরির স্থায়ীকরণের।
0 Comments