আমাদের মায়েরা কি গোর্কীর মায়ের মত নয়?

তাপস দাস

একাশি বছরের বৃদ্ধা জননী বলবিন্দর কাউর। গ্রামের অন্য পাঁচজনের সঙ্গে পাঞ্জাবের সাঙ্গরু থেকে এসেছিলেন টিকরি বর্ডারে। সন্তান, পরিবার বাঁধা দিয়েছিল, কিন্তু মা বলেছিলেন-"এই স্বাধীন দেশে আমি কখনই জমিদারী, ব্রিটিশ শাসন ফিরিয়ে আনতে দেব না।" হে উল্লাস তরঙ্গ তাঁকেও উপেক্ষা করলে! অবহেলায় ভুলে গেলে প্রবীণার স্পর্ধা? আমাদের মায়েরা কি ম্যাক্সিম গোর্কীর মায়ের মত নয়?

   শীতের জিরো ডিগ্রী, দহনের ৪৫ ডিগ্রী আঁচলে নিয়ে ছিনে জোঁকের মত পড়েছিল ফৈজানপুরের মমতা। বলেছিল- " কেন আমি ছয় মাসের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে এই শীতে দূষণে দুর্বিষহে  এখানে পড়ে আছি? তোমরা জান না কিষাণের অসহ্য জীবন। আমার সন্তানের জন্যে যুদ্ধে এসেছি, তাকে যেন ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করতে না হয়। এই সীমান্তে দোপাট্টা কোমরে বেঁধে স্বামীর পাশে লড়াই করছি।" যেন লখিন্দরের পাশে বেহুলা। 

   রামপুরের রাধা জানতই সিঙ্ঘু কতদূর! সেই রাধা চিৎকার করে বলেছিল- আমি চাই না বৈধব্য। চাই না আমার সন্তানেরা পিতৃহারা হোক। আমার সন্তানের পিতা, গরমে পিচ গলা রাস্তায় শুয়ে আছে, আমি কীভাবে ঘরে থাকি? আমরা এক ইঞ্চি জমি ছাড়বো না। জিতবো আমরাই।" জয় এসেছে, রাধা ফিরে যাবে ঘরে। ইতিহাস লিখে রাখবে রাধাকে?
 
   সময়ের পাথর সরিয়ে কে খুঁজবে টিকরি বর্ডারের বাহাদুরগড়ে অমরজিৎ কাউর, গুরমিল কাউর, ছিন্দার কাউর তিন হরিণাভী কিষাণীর ছায়? একটা দৈত্যাকার ট্রাক তাঁদের পিষে দিয়ে গেছে।

   সিঙ্ঘু, টিকরি, চিল্লার যেকোনো সীমান্তে মাটির কাছে কান পাতো শুনতে পাবে হাজার হরিণাভী যুবতী আলেখ্য। দেখতে পাবে সূর্যমুখী, কমলা গোলাপি ওড়নার রঙ বসন্তে মেয়েরা ক্লান্তি বিষাদ গেয়েছে জলোচ্ছ্বাস। এই জয় যেন লিখে রাখে হাজার অযুত সংগ্রামী বলবিন্দর, রাধাদের কলরব।

Post a Comment

0 Comments