মেরুদন্ডের অপর নাম কমরেড ফটিক ঘোষ: প্রয়ান দিবসের স্মৃতি থেকে

শুভ্র মল্লিক

দিনটা ছিলো ২০১৭ সালের ২৬ শে নভেম্বর।সদ্য নভেম্বর বিপ্লব শতবর্ষ শেষ হয়েছে।প্রবল শীত পড়েছে সেদিন।এর কয়েকদিন আগেই সেরিব্রাল অ্যাটাক হবার ফলে ফটিক জ্যাঠু ভর্তি হয়েছিলো কলকাতার একটি হাসপাতালে।বাঁচার আশা ছিলো না।কারন ৮৬ উর্ধো প্রবীনের মস্তিষ্কের অপরেশন করা মানে মৃত্যুর সম্ভাবনাই প্রবল হয়।আর না করলেও মৃত্যু নিশ্চিত।শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।তখন অপেক্ষা ছাড়া আর কোন ও রাস্তা থাকে না।ফটিক জ্যাঠুর ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছিলো।২৬ তারিখ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম হাঁসপাতালের উদ্দেশ্যে একটা পর্বত প্রমান শোক নিয়ে।ফটিক জ্যাঠু আর নেই।তাঁর মরদেহের কঠিন ভারটা বহন করতে হবে।দুপুরে ই পৌঁছে গেলাম হাসপাতালে।জুট মিলের কিছু শ্রমিককে নিয়ে ততক্ষনে হাঁসপাতালে পৌঁছে গেছে সামিম কাকু তাদের প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।কিছুক্ষন পর সাদা কাপোড়ে মোড়া গলায় ও মুখে ব্যান্ডেজ জড়ানো সদ্য মৃত ফটিক জ্যাঠুর মৃত দেহটা নিয়ে চলে এলো হাসপাতালের কর্মীরা।আমাদের হাতে মৃতদেহ হস্তান্তর করে ওরা চলে গেলো।আমরা কয়েকজন মিলে সেই মৃতদেহ নিয়ে শববাহী গাড়ি পর্যন্ত এলাম।এরপর গাড়ি সোজা রহনা দিলো চুনি বাবুর বাজারের উদ্দেশ্যে।যেখানে ফটিক জ্যাঠু থাকতেন।সেখানে দেখলাম বিনয় জ্যাঠু সহ আর ও কিছু সহযোদ্ধারা অপেক্ষা করছে।ভূদেব জ্যাঠু,বাবু সোনা দারাও এসেছিলো।পবিত্রা পিসি ও এসেছিল।এছাড়া আর ও অনেকেই এসেছিলো।বাইরের রাজ্যের কমরেডরা অল্প সময়ের মধ্যে আস্তে পারেনি।তবে শোকবার্তা পাঠিয়েছে।তথাগত দার বাবা CPIM এর ট্রেড ইউনিয়ন করতো।ষাট বা সত্তোরের দশকে কোন ও যৌথ কর্মসূচিতে ফটিক জ্যাঠুর সাথে কিছুদিন কাজ করেছিলো।তথাগত দার থেকে ফটিক জ্যাঠুর মৃত্যুর খবর শুনে চলে এসেছিলো।যদিও ফটিক জ্যাঠুর মৃত্যুর খবর শুধু রেডিও তে সম্প্রচারিত হয়।তাই অনেকেই ঠিক সময় মতন জানতে পারেননি।সেটা হলে হয়তো অনেকে আস্তে পারতো।তারপর SUCIC থেকে প্রাপ্ত নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা তো ছিলো।এ জন্যে কিছুটা রক্ষনশীল থাকতে হয়েছিলো এই খবর সম্প্রচার নিয়ে সে সময়।যদিও SUCIC এর মেনোকা বসু রায় হাতে স্ক্র্যাচ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এসেছে পাশের ফ্ল্যাট থেকে।জয়নগরের আদি বাসিন্দা অধ্যাপক সুধীর ভট্টাচার্য ও উপস্থিত ছিলো।এই দুই SUCIC নেতা মূলত নজরদারি করতেই এসেছিলো এ বিষয় সন্দেহ নেই।এছাড়া বিশিষ্ট সাহিত্যিক বিজয় বন্দোপাধ্যায় ও এসেছিলেন পুরানো সহযোদ্ধাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।সবার শ্রাদ্ধা জানানো শেষ হলে লাল সালু তে জড়ানো ফটিক জ্যাঠুর মৃতদেহ বাহি গড়ি চলে গেলো নিমতলা শ্মসানের উদ্দেশ্যে।একটু অপেক্ষা করতে হলো।শীতকালে এমনিতেই মৃতদেহের একটা চাপ থাকে কলকাতার বড় বড় শ্মশান গুলোতে।একটু অপেক্ষার পর চুল্লিতে দিয়ে দেওয়া হলো ফটিক জ্যাঠুর মৃতদেহ।তারপর এক যুগের অবসানের দীর্ঘ শোক বুকে নিয়ে আমরা ফিরলাম যে যার মতন।
           
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য,
উচ্চ যেথা শির....
এখন SUCIC দলের মধ্যে প্রশ্ন করলে প্রায় ই নেতারা একটা কথা বলে 'নতুন দল গড়ে দেখাও।' প্রশ্নের উত্তর ও দেয়না।নিজেদের অপকর্ম স্বীকার করে তা পরিবর্তনের চেষ্টাও করে‌ না।আর এগুলোকে দাম্ভিক আত্ম অহংকার দিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে।কমরেড ফটিক ঘোষ এখানেই ব্যাতিক্রম ছিলেন।প্রায় ৬০ বছর অতিক্রান্ত করে দল ছাড়েন।দল ছাড়ার পর নতুন করে বামপন্থী দল গঠনের চেষ্টা শুরু করেন।যার বর্তমান নাম CWP। কমিউনিস্ট ওয়ার্কার্স প্ল্যাটফর্ম।দলের মধ্যে অনেকেই ছিলো বা আছেন যাদের খাওয়া পড়ার কথা ভাবতে হয়।সেদিক থেকে অনেকে পিছিয়ে যায়।অনেকে বয়সের কথা ভাবে।তাই সব বুঝে আপোষ ‌করতে বাধ্য হয়।এখানেই ব্যাতিক্রম ছিলেন কমরেড ফটিক ঘোষ।যিনি আপোষ করলে অনেক সুখেই থাকতে পারতেন অনেকের চেয়ে বেশিই।শুধু বলতে হতো প্রভাস ঘোষ জিন্দাবাদ তাহলেই ফটিক ঘোষ অবলীলায় দলের নেতা হয়ে রাজত্ব করতে পারতেন কোনো পরিশ্রম না করে।কিন্তু এটা ফটিক জ্যাঠু কখন ও করতে শেখেননি।শিবদাস ঘোষের ভাই তো তাই মাথা ঝোঁকানোটা তার রক্তে ছিলো না।এই ছিলো তার প্রধান অপরাধ।তাই শ্রমিক আন্দোলনের রাজ্য রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ ও দলের সম্পদ হয়েও তাঁকে দল থেকে সরতে হলো।সেদিন চোখের জল ফেলতে ফেলতে প্রবল স্নেহে জড়িয়ে রাখতে চেয়েছিলেন কমরেড প্রীতিশ চন্দ।বলেছিলেন,' এই বৃদ্ধ বয়সে বেরিয়ে গিয়ে কি করবে?অন্তত মৃত্যুর আগে রেড স্যালুট টা তো পাবে!' ফটিক জ্যাঠুর সোজা উত্তর ছিলো ,'আপনি রেড স্যালুট পাবার আশায় বসে থাকুন আমি চললাম।'দল ছাড়ার সময় প্রীতিশ চন্দ্র ফটিক জ্যাঠুর বাড়িতে এসে ওনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন রুদ্ধ দ্বার মিটিং করে।প্রতীশ চন্দ্রের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখেই তাঁকে রিফিউস করেন সেদিন।পরে বিভিন্ন সময় ঘরোয়া আলোচনায় সেদিনকার কথা আমাদের বলতেন।পরে দল ছাড়ার পর প্রীতিশ চন্দ্র ক্যান্সার আক্রান্ত হলে প্রতীশ চন্দ্র ডাকলে দৌড়ে গেছেন প্রীতিশ চন্দ্রকে দেখতে।প্রভাস ঘোষ এর মধ্যে তার কাজ থামিয়ে রাখেনি। অসুস্থ প্রতীশ চন্দ্রের ডাকে তাঁর সাথে কমরেড ফটিক ঘোষ দেখা করতে গেলে সেখানেও দলিয় স্পাই লাগিয়ে রাখে দল।এতটা নিকৃষ্ট ছিলো এরা।প্রীতিশ চন্দ্রের মৃত্যুর পর সবাইকে মালা দিতে দিলেও শঙ্কর সিং কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেয়নি নীহার মুখার্জি।শুধু প্রভাস ঘোষনা SUC রাজনীতিকে কলুষিত করতে নীহার মুখার্জির অবদান ও অবিস্মরণীয়।SUC পচনের সতর্ক বার্তাই ছিলো কমরেড ফটিক ঘোষের দল ছাড়া।সেদিন অনেকেই নানা কারনে এ কথা ধরতে পারেননি।২০০৯ সালের দ্বিতীয় পার্টি কংগ্রেসের পর সে সত্য জলের মতন পরিষ্কার হয়ে যায়।দলটা আর বিপ্লবী দল ই নয়।দলটা পচে যাওয়া একটা দলে পরিনত হয়েছে দলের সং-বিধান গোপনে বদল করে।দলের নাম ও দলের প্রতিষ্ঠা দিবস যায় পাল্টে।সর্বপরি দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাল্টে যায়।এসব ঘটনাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রমান করে ১৯৯৫ সালে ফটিক ঘোষ ই ঠিক ছিলেন।যদিও তাঁকে বহিষ্কারের লোক দেখানো জিবি মিটিং এ তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে কিছু বলতে দেওয়া হয়নি।শুধু এক পক্ষের অভিযোগ বর্ষন হয়েছে তার সত্যতা যাচাই ছাড়াই।এর উপর দাঁড়িয়ে গুটিকয়েক নেতার ব্যাক্তিগত দূর্ভিসন্ধিকে বিচারের নামে চালিয়েও দেওয়া হয়েছে।যে বিচার প্রক্রিয়া বুর্জোয়া বিচার প্রক্রিয়াকে ও লজ্জায় ফেলে দেবে।এরা আবার বলে এরা কমিউনিস্ট?বুর্জোয়াদের থেকে নাকি উন্নত?অথচ আচরন বুর্জোয়াদের থেকেও নীচ।এই ছিলো সেদিনকার‌ বিতর্কের সত্যতা।এমনকি কমরেড ফটিক ঘোষের বিচারের নাম করে ডাকা জিবির এক মাস আগে বিহার থেকে এক রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর নেতাকে কলকাতায় ডেকে প্রভাস ঘোষ টোপ দিয়ে বলেছিলো তার দলে ভিড়ে যেতে।এক মাস পরেই তারা কমরেড ফটিক ঘোষকে দল থেকে বার করে দিচ্ছে ,প্ল্যান রেডি।এ কথা দলের বিহারের ঐ পূর্বতন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ই আমাকে বলে।তিনি প্রভাস ঘোষের কু প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করে সেদিন দলের মধ্যে লড়াই করার প্রতি ভরসা রেখেছিলেন।কিন্তু সেটাও অচিরেই ভুল প্রমানিত হয় কমরেড শঙ্কর সিংয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি নেতৃত্বের চক্রান্ত প্রকাশ্যে আসায়। তাহলেই বুঝে দেখুন ফটিক ঘোষকে দল থেকে সরানো প্রি ডিটারমাইন্ড বিচার‌কে জিবি ডেকে গনতান্ত্রিক মোড়ক দেওয়ার অপ্রয়োজনীয় প্রয়াস করার প্রয়োজন কি ছিল?এটা বিচারের নামে প্রহসন নয় তো আবার কি?অথচ এটাই কলকাতার সেই জিবি তে হয়েছিলো যেখানে কমরেড ফটিক ঘোষকে বিতাড়িত করা হয় বলে SUCIC নেতৃত্ব এখন ও দাবী করে।আর এ চক্রান্তের বলী কমরেড ফটিক ঘোষের পর একে একে অনেকেই হয়।তখন ছবিটা অনেকের কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করে।প্রভাস ঘোষ নেতৃত্বে তার ক্ষমতা দখলের জন্যে ই তার পথের কাঁটাদের এভাবে চক্রন্ত করে সরায়।এটার পেছোনে কোন ও বৈপ্লবীক মহৎ উদ্দেশ্য ছিলো না।ছিলো ক্ষমতা দখলের নোংরা খেলা।এর বলী পরবর্তিকালে হয় ফটিক ঘোষের বহিষ্কারের প্রশ্নে প্রভাস ঘোষের অনুচরবৃত্তি করা বিধান চ্যাটার্জি ও।সে নিজেই সুইসাইড করে প্রভাস ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপ ও নারী ঘটিত অভিযোগ এনে।সেদিন যাদের একটু  বোধ বুদ্ধি ছিলো তাদের কারোর ই বুঝতে বাকি থাকেনি দলটার কফিনের শেষ পেরেক প্রভাস ঘোষ পুঁতে ফেলেছে। বিধান চ্যাটার্জির সুইসাইড নোট থাকার পর ও তৎকালীন CPM সরকার যেভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দিলো তাতে এটাও পরিষ্কার হয়ে গেলো বাইরে যত ই SUC-CPM কুস্তি থাকনা কেন CPM প্রভাস ঘোষ কে SUC এর মধ্যে শাসক দলের এজেন্ট হিসাবে কাজে লাগাচ্ছে।আর এক ই ঘটনা আর ও খোলাখুলি আমরা তৃনমূল জামানায় এসেও দেখলাম।শাসকের সাথে দস্তি রেখে চলায় প্রভাস ঘোষের জুড়ি মেলা ভার।শাসকের অনুগত হিসাবেই সে SUCIC দলকে শেষ করলো রাষ্ট্রের এজেন্ট হিসাবে।আর এটা করতে গিয়ে যারাই বিরোধীতা করেছে তাদের ই সে দল ছাড়া করে ছেড়েছে নানা অপবাদ দিয়ে।আর যখন নিজের চালাকি ধরা পড়ে গেছে কর্মীদের কাছে তখন ই দাম্ভিক ভাবমূর্তি নিয়ে বলেছে কে কি করতে পেরেছে দল ছেড়ে গিয়ে?এই দাম্ভিকতাকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্নের নাম ও সাহসের নাম ছিলো কমরেড ফটিক ঘোষ।নতুন করে দল গঠনের প্রচেষ্টা করে দেখিয়ে দিয়েছেন সব চ্যালেঞ্জ সবাইকে ছুঁড়তে নেই এটা ব্যুমেরাং ও হতে পারে।আর সেটাই হয়েছে।ফটিক ঘোষ আজ নেই কিন্তু তাঁর দল আছে।বাংলায় সংগঠনের কাজ তাঁর অনুপস্থিতিতে স্থিমিত হলেও তামিলনাড়ুর নতুন নতুন তরুন ছাত্র যুবকরা CWP এর ট্রেড ইউনিয়নের পতাকা তলে স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে গড়ে তুলছে শ্রমিক সংগঠন।কে বলেছে ফটিক ঘোষ মরে গেছে?দেহ মরেছে।কিন্তু তাঁর স্বপ্ন বেঁচে আছে তারুন্য ও সংগ্রামী যুবকদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে।তাদের কেউ কেউ এক সময় SUC তে ছিলো কিছু দিন কেউ বা কখন ও SUC করেনি।একে বারে নতুন তরতাজা ছাত্র যুব কমরেড শঙ্কর সিং ও কমরেড ফটিক ঘোষের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করে চলেছে শ্রমিক শ্রেনীর অধিকার রক্ষার লড়াইকে শক্তিশালী করার মধ্যে দিয়ে।প্রভাস ঘোষের তোতা বুলি এখানে সপাটে চড় খেয়েছে।তাই ব্যাথা তো হবেই।
              হিটলারের প্রচার সচিব গোয়েবেলস বলেছিলো ,'মিথ্যাকে জোরের সাথে প্রচার করো, তাহলে একদিন মিথ্যাকেই জনগন সত্যের মর্যাদা দিয়ে দেবে।'প্রভাস ঘোষ কম্পানি এ কথাটা খুব ভালো জানে।চালে কেবল ভুল করে দিয়েছে সোস্যাল মিডিয়া এসে।আজ SUCIC গোয়েবেলসের পথ ধরে মোটামুটি ২৫-৩০ বছর ধরে টানা হেট ক্যাম্পেইন করে ফটিক ঘোষকে বিশ্বের পয়লা নং ভিলেন বানিয়ে ছেড়েছে।কিন্তু সেটা কেবল SUCIC এর বিশ্বেই সীমাবদ্ধ।গোবর গনেশ মার্কা ভক্ত কর্মী ভোলাতে এরকম অনেক মিথ্যাকেই দল দিনের পর দিন প্রচার করে করে দলের মধ্যে প্রায় সত্যের মতন কর্মীদের দিয়ে বিশ্বাস করানোর যেয়গায় নিয়ে গেছে।কিন্তু কেউ জানে না আসল সত্য কি?জানার চেষ্টাও নেই।নেতাকে ভগবান মেনে সব সত্যকে ভগবানের পায়ে কবর দিয়ে দিয়েছে SUCIC দলের কর্মীরা মস্তিষ্ক বন্দক দিয়ে।তাই ফটিক ঘোষ ও আজ তাদের চোখে ভিলেন।কোন ও দিন নেতাও যদি বলে শিবদাস ঘোষ ও ভিলেন সেটাও হয়তো ভক্ত কর্মীগন অন্ধত্বের সাথেই মেনে নেবে বীনা প্রশ্নে।তবে তার জন্যে আর ও কিছুটা নেতাদের খাটতে হবে।কিছু ভক্ত গাধা গুলো কে ছাগোল বানাতে হবে তার জন্যে।তাহলেই কার্য সিদ্ধি হয়ে যাবে।
        কমরেড ফটিক ঘোষ ছিলেন কমরেড সুবোধ ব্যানার্জীর পরেই দলের শ্রমিক ইউনিয়নের সবচেয়ে পরিচিত মুখ।শুধু দল নয় দলের বাইরেও ছিলো তাঁর প্রবল পরিচিতি।এ রাজ্যের শাসক, বিরোধী সব দলের নেতা মন্ত্রী,বড় বড় আমলারা সবাই কমরেড ফটিক ঘোষকে‌ এক ডাকে চিনতো।রাইটার্সে ফটিক ঘোষ গেলে কখন ও অনুমতির প্রয়োজন পড়তো না।বড় বড় আমলাদের কাছেও অনেক সময় শ্রমিকরা সমস্যা নিয়ে জানালে তারা ই সেই সমস্যা মেটাতে কমরেড ফটিক ঘোষকে রেফার করতো।এ ঘটনাও ঘটেছে।এর সুফল একদা দল পেয়েছে।সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের জামানায় সেন্ট্রাল কমিউন অ্যাটাক্ড হয়েছে কংগ্রেসি গুন্ডাদের হাতে।সে সময় বনমালি চ্যাটার্জি স্ট্রিটের সেই কমিউনে শিবদাস ঘোষ ও ছিলেন।সেদিন বুদ্ধিমত্তার সাথে কমরেড ফটিক ঘোষ শিবদাস ঘোষ সহ বাকি কর্মীদের বাঁচান কংগ্রাসি গুন্ডাদের হাত থেকে।ট্রেড ইউনিয়নে মারের পাল্টা মার এই ভাষা শিখিয়েছিলেন AIUTUC লেনিন সরনীকে ফটিক ঘোষ।এ জন্যে সংগঠন বেড়েছিলো। বিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যেও নিজেদের প্রভাব তৈরি করার বিষয় কমরেড সুবোধ ব্যানার্জীর পর যিনি দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন তিনি কমরেড ফটিক ঘোষ।এই ধকগুলো ফটিক ঘোষ ই ধরার ক্ষমতা রাখতো।চোখে চোখ রেখে লড়াই একেই বলে ।ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় রেজিস্ট্রেশান ও অর্জিত হয়েছিলো ফটিক ঘোষের দৌলতে।যদিও একথা আজ AIUTUC এর নেতারা স্বীকার করে না নির্লজ্জের মতন।কমরেড ইয়াকুব পৈলান এক সময় CPM এর গুন্ডাবাহীনি দ্বারা আক্রান্ত হলে কমরেড ফটিক ঘোষ ই তাঁকে উদ্ধার করেন রীতিমতন আমলা ও প্রশাসনকে থ্রেট করে।আর তাতেই কাজ হয়ে যায়।এই দম সকলার থাকে না।আজ কালকার ভিজে বেড়াল মার্কা SUCIC এর পালিতবুড়ো ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা তো আন্দোলন ই তুলে নেয় ভয়ে শাসক দলের নেতারা হুমকি দিলেই।আর ফটিক ঘোষ তো শাসকদলের মুখের উপর হুমকি দিয়ে দলের কর্মীদের উদ্ধার করতো।এটাই নৈতিক পার্থক্য দলের বর্তমান অপদার্থ নেতাগনের সাথে কমরেড ফটিক ঘোষের।দলের সাথে যুক্ত হয়েছে হাফ প্যান্ট পড়া বয়সে স্কুলে পড়ার সময়।সাথে বাসন্তি কটন মিলসে দিনে কাজ করতেন।রাতে নাইট স্কুলে পড়তেন।যদিও এভাবে বেশিদিন চরম অভাব ও দারিদ্র্যতার মধ্যে পড়াশোনা বেশিদিন টানতে‌ পারেননি।বাসন্তি কটন মিলস থেকেই কমরেড শঙ্কর সিংয়ের হাত ধরেই ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়ে যায় কমরেড ফটিক ঘোষের।এটা ফটিক জ্যাঠুই আমাকে বলেছিলেন।শিবদাস ঘোষের ভাই হবার সুবাদে জন্ম থেকেই শিবদাস ঘোষের সংস্পর্শ তিনি পেয়েছেন।শিবদাস ঘোষ ব্রিটিশ আমলে ধরা পড়ে জেলে গেলে যখন দাদাকে দেখতে যেতেন তখন ফর্সা ও দেখতে সুন্দর হবার ফলে শিশু ফটিক ঘোষকে ব্রিটিশ পুলিশ একবার গাল টিপে দিয়েছিলো সেটা উনি পছন্দ করেননি।দাদাকে যারা দেশের কাজ করার জন্যে জেলে ঢুকিয়েছে তারা আমার গাল টিপবে আর আমি মেনে নেবো!বিষয়টা এরকম ই ছিলো।ছোট থেকেই দাদার মতন ফুটবল খেলায় খুব পটু ছিলেন কমরেড ফটিক ঘোষ।দোকানে যাবার ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে ফুটবল খেলতে চলে যেতেন।পরে বড় হয়ে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান খেলা হলে আর এক বন্ধু ফুটবল প্রেমি রঞ্জিৎ ধরকে  সাথে নিয়ে টিকিট জোগাড় করে খেলা দেখতে যেতেন।বয়স্কালে মাঠে না যেতে পারলেও টিভিতে খেলা হলে সব কাজ সেরে ঐ সময় স্ব পরিবারে খেলা দেখতেন।এটার কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমার ও আছে।তবে পিকে ব্যানার্জির খেলা পছন্দ করতেন না।বেশ সমালোচনা করতেন।আর বলতেন দাদাও ওর খেলা নিয়ে সমালোচনা করতো।যখন পরে দল গড়ে উঠলে ভাইকেও দলে টেনে নেন দাদা শিবদাস ঘোষ।যদিও শিবদাস ঘোষকে ফটিক ঘোষ দাদা বলতো বলে এক সময় প্রভাস ঘোষ আপত্তি জানিয়ে বলেছিলো শিব বাবু বলে ডাকতে।সেদিন ফটিক ঘোষের ঝাড় খেয়ে আর সাহস করেনি পরে এমন কথা বলার।যদিও পরে শিবদাস ঘোষকে নিজের দাদা বানিয়ে ফেলেছে প্রভাস ঘোষ।শিবদাস ঘোষ ও যখন বেঁচে নেই আর ফটিক ঘোষ ও যখন দল ছেড়েছে।
         এরকম অনেক স্মৃতি ,অনেক কথা ই মনে পড়ে এই দিন টি এলে।অনেক সময় এক সাথে সময় কাটিয়েছি কমরেড ফটিক ঘোষের সাথে।বহু আবেগ তাই খুব সঙ্গত কারনেই মিশে আছে কমরেড ফটিক ঘোষের সাথে।অনেক কিছু শিখেছি জেনেছি ওনার থেকে।অনেক অপূর্নতাও থেকে গেছে।আজ কমরেড ফটিক ঘোষের মৃত্যু দিন।এই দিনটিতে যখন বেইমানের দল নিশ্চুপ থাকে ফটিক ঘোষের দীর্ঘদিনের শ্রমকে নিজেদের আঁখের গোছাতে কাজে লাগিয়ে কমরেড ফটিক ঘোষকে ‌নিয়েই কুৎসা করে তখন চুপ থাকা যায় না। মেরুদন্ডের নামটা চিল্লে চিল্লে বলতে হয়‌ ভক্তগনের পরাধীনতা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা নিয়ে 'কমরেড ফটিক ঘোষ মেরুদন্ডের এক নাম।'

Post a Comment

0 Comments