আজকের ঐতিহাসিক দিনে ভাঙড়ের সংগ্রাম নিয়ে কিছু কথা


অলীক চক্রবর্তী

কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সংগ্রামের বিজয়লগ্নে ভাঙড় আন্দোলনের ফলাফল  নিয়ে আবার নতুন করে প্রশ্ন তুলে এই সংগ্রামের নেতৃত্বকে সমঝোতাকারী ইত্যাদি বলে আক্রমণ করার কিছু প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে।  লড়াই চালিয়ে গেলে আরও ভালো ফল হতে পারত, ইউ এ পি এ এখনও কেন প্রত্যাহার হল না ইত্যাদি নানান প্রসঙ্গকে সামনে তুলে এই আন্দোলনের তাৎপর্যকেই বাতিল করার কিছু প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।  তাই কিছু কথা এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে। 

শুরুতেই বলি ব্যাপ্তি ও গভীরতা উভয় দিক দিয়ে বর্তমান কৃষক আন্দোলনের সাথে ভাঙড় আন্দোলনের তুলনা টানা কোনো প্রাজ্ঞতার লক্ষণ নয়। অন্যদিকে আক্রমণকারী দের বিচার করলে বলা যায় ভাঙড়ে আক্রমণকারীদের শক্তি ও ঐক্য ছিল বৃহত্তর। যে কৃষি আইন পাশ হয়েছে তার বিরুদ্ধে সংসদ এর উভয় কক্ষে সংসদীয় বিরোধী পক্ষ বিরোধ করেছে। বিজেপি সরকার কার্যত এই প্রশ্নে একা হয়ে পড়েছিল। সংসদের বাইরে কৃষক আন্দোলন যে সুবিশাল চেহারা নিয়েছিল তা কোনো একটি এলাকার ঐক্য নয়, তা পাঞ্জাব,  হরিয়ানা,  পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষক জনতার সার্বিক ঐক্যের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে ছিল। লালকেল্লার দখল নেবার জায়গায় নিজেকে পৌঁছে দিয়েছিল। 


অন্যদিকে পাওয়ার গ্রীড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিরুপদ্রবে কেন্দ্র সরকার পাশ করেছিল,  রাজ্য সরকার এর তত্ত্বাবধানে তা তৈরি হচ্ছিল। 
কোনোদিক থেকেই কোনো কার্যকরী বিরোধিতা আসে নি। সাব স্টেশনের মধ্যেকার কাজ ৯০% শেষ হবার পর লড়াই শুরু হয়েছিল।  তারজন্য কোনও পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে মাত্র একটি পঞ্চায়েত অঞ্চল।  না তার সবটাও নয় ধারাবাহিকভাবে লড়েছে বাস্তবত তিনটে গ্রাম।  সেই লড়াই বাধ্য করেছে সরকারকে মূল প্রকল্প থেকে সরে আসতে।  বাধ্য করেছে পাওয়ার গ্রীড কর্পোরেশন এর পাওয়ার গ্রীড তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করে একটি সাধারণ সাবস্টেশনে তাকে পরিবর্তিত করতে। নোটিফিকেশন জারী করে  ১৬ টি লাইন তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করতে। অন্যদিকে আন্দোলনরত কৃষকূদের ক্ষতিপূরণ দিতে। বহু মামলাই প্রত্যাহৃত হয়েছে,  যারমধ্যে মার্ডার কেস ও রয়েছে।  

তবে এখনও বেশকিছু মামলা বাতিল হয় নি, ইউ এ পি এ এখনও প্রত্যাহৃত হয় নি, হিমঘর এখনও তৈরি হয় নি। কোভিড পরিস্থিতিও এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী,  কারণ কোর্টের কাজকর্ম হতে পারে নি। আর আমরা জানি কোনো চুক্তি তখনই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি মেনে চলে, যখন পর্যাপ্ত লড়াই জারী থাকে। ইউ এ পি এও বাতিল হবে। চুক্তিকে পূর্ণ রূপায়নের লড়াই জারী আছে,  সেই জয় হাসিল করার আত্মবিশ্বাসও আমাদের আছে। 

এটা আরও সহজ হত যদি আন্দোলনের 'শুভাকাঙ্ক্ষীরা' ছিদ্রান্বেষনে যতটা তৎপর তার সিকিভাগ তৎপরতা আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেবার জন্য দেখাতেন।কিন্তু তা হবার নয়, আজকে ভাঙড়ের সংগ্রামী জনতা সিপিআই (এম-এল) রেড স্টার কে নিয়ে যে লড়াই শুরু করেছিল সেই শক্তিকে সাথে নিয়েই লড়াইতে আরও দৃঢতার সাথে লড়ছে। শুধু পাওয়ার গ্রীড এর বিষয়ে নয়, অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার প্রশ্ন, ১০০ দিনের কাজের প্রশ্ন সহ নানান গণতান্ত্রিক দাবীতে লড়াইকে ছড়িয়ে দিয়েছে।  সাধারণ রাজনৈতিক প্রতিটি বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংগ্রামী জনগণের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রনী ভূমিকায় নিজেকে স্থাপন করেছে। যাঁরা ছিদ্রান্বেষনে ব্যস্ত তারা আর কিছুটা অপেক্ষা করুন। ভাঙড়ের জনগণ চুক্তির পূর্ণমাত্রায় রূপায়ন করে অথবা এক ব্যাপক লড়াইয়ের প্রদর্শন করে আপনাদের 'আহ্লাদিত' করবে।

দিল্লির সংগ্রামী কৃষক জনতা লাল সেলাম
ভাঙড়ের সংগ্রামী কৃষক জনতা লাল সেলাম


লেখক রাজনৈতিক কর্মী, ভাঙড় আন্দোলনের সংগঠক

Post a Comment

0 Comments