দেউচা-পাঁচামি কয়লা খনি বিরোধী লড়াই শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়, প্রয়োজন বিকল্প শক্তির প্রসারের দাবী


দেউচা-পাঁচামি কয়লা খনি বন্ধের লড়াই শুধু মাত্র পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়, এর সাথে বিকল্প শক্তির প্রসারের দাবীও শক্তিশালী হওয়া দরকার পরিবেশের স্বাস্থ্যদ্ধারের প্রয়োজনে। লিখেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি-র এম.টেক পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের ছাত্র শুভ্র মল্লিক

সুজন বাবুরা শিল্পের স্বপ্ন দেখেন।কথায় কথায় সিঙ্গুরে শিল্প না হওয়া নিয়ে খোঁচা দেন।জেনো  সিঙ্গুরে শিল্প হয়নি বলেই আজ বাংলায় মন্বন্তর নেমেছে।ভাবখানা এমন।কিন্তু একথা বলেন না দিল্লির আশেপাশে গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলের দূষনের প্রভাবে দিল্লিতে দূষনের মাত্রা এতো বেড়ে গেছে যে সেখানে অক্সিজেন পার্লার খুলতে হয়।শীতে একটা বড় সময় দিল্লি অচল হয়ে থাকে ঘন কুয়াশায়‌।দিল্লির অদূরেই রয়েছে নয়ডার শিল্পাঞ্চল।শিল্প আছে,কর্ম সংস্থান আছে‌।কিন্তু জনগনের ভবিষ্যৎ অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনের জন্যে প্রস্তুত ও হচ্ছে।শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের নাম কি জনগনের প্রান সংকট?এ নিয়ে কোন ও কথা সুজন বাবুরা বলেন না।সম্প্রতি দেউচার  ঘটনা নিয়ে ও সুজন বাবুর বক্তব্যে সেই সিঙ্গুর প্রসঙ্গ এসেছে। কিন্তু আসেনি পরিবেশ প্রসঙ্গ। তৃনমূলের প্রতি জাতি বিদ্বেষের মতন তথাকথিত বিরোধীতার স্বর থেকেই আবার দেউচা প্রকল্পের বিরোধীতা ও সুজন বাবুরা করেছে।বক্তব্যের মধ্যে নানা অস্বচ্ছতা থাকলেও এই বিষয়ে শেষ পর্যন্ত পরিষ্কার করেছে  সুজন বাবুরা অন্তত দেউচা প্রকল্প চাইছেন না।
           অন্যদিকে আর এক রত্ন রাজনৈতিক দল SUCIC তো নগ্ন ভাবেই কয়লা খনির পক্ষে সরকারি দালালি শুরু করেছে।এতো খুললাম খুল্লা দালালি পশ্চিমবঙ্গে কোন ও বাম দল দেউচা নিয়ে এখন ও করেনি।আর এর জন্যে নাগরিক কনভেনশন করার রাস্তায় ও পা বাড়িয়েছে SUCIC।২৬ শে ডিসেম্বর এই নাগরিক সভা হচ্ছে বীরভূমের সিউড়িতে।যেখানে দাবী রাখা হয়েছে বনাঞ্চল ধ্বংস না করে কয়লা খনি করার কথা।মানে কয়লাখনি হোক এটায় তাদের কোন ও আপত্তি যে নেই এই বিষয়ে তারা তাদের মতামত পরিষ্কার করেছে।আর এর সাথে সাথে তাদের কর্পোরেট দালালির নগ্ন চরিত্র ও প্রকাশিত হয়েছে।যেখানে দেউচার গরিব আদিবাসী জনগন তাদের জীবন,জীবিকা, বাসস্থান রক্ষার মরন পন সংগ্রামের রাস্তায় পা বাড়িয়েছে সেখানে এই সিদ্ধান্ত শোষিত আদিবাসীদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।জল ,জঙ্গল ও জমি রক্ষার নামে এটা আদ্যপান্ত ভাঁওতাবাজি।বামপন্থার নামাবলী জড়িয়ে বামপন্থার আদর্শের  প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
     সিপি আই এম এল দেউচা নিয়ে সরাসরিই বলেছে দেউচা প্রকল্প বন্ধের দাবীতে।বাকি বাম দলগুলোর অবস্থান মোটামুটি এক। SUCIC বাদে প্রত্যেক বামপন্থী দলই দেউচার বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যবদ্ধ মতামত ব্যাক্ত করেছেন।তাতে এটা স্পষ্ট বলার ধরন ও যুক্তির তারতম্য কিছু থাকলেও দেউচার প্রকল্প বন্ধ করা দরকার।এ বিষয় ম্যাক্সিমাম বাম দল সহমতে এসেছে।ডানপন্থী দলগুলোর কথা বাদ দিলাম।তারা এ সব বিষয় নিয়ে ভাবেই না ফুটেজ ছাড়া।
            বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসাবে যেহেতু বামপন্থীদের গ্রহনযোগ্যতা জনসাধারণের মধ্যে অনেক বেশি সেজন্যে রাষ্ট্রীয় কোন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বামপন্থীদের বক্তব্য একটা গুরুত্ব রাখে।তাই তাদের মতামত নিয়ে আলোচনা , সমালোচনা প্রয়োজনীয় সামাজিক প্রয়োজনেই।তাই তাদের কথা আগে বলতে হয়।দেউচা কয়লা খনি প্রকল্প ও তার ব্যাতিক্রম নয়।তাই প্রথমেই এদের অবস্থান সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির নানা তারতম্য ও তার মেরিট এবং ডিমেরিট একটা আলোচ্য বিষয় হিসাবে উঠে আসে।এতো গেলো বামপন্থীদের বিভিন্ন অবস্থান ও তাদের স্বরূপ।এদিকে দেউচায় আদিবাসী জনগন ও আন্দোলনে নেমেছে তাদের অধিকার রক্ষায়।তাদের উপর রাষ্ট্রীয় দমন পীড়ন ও আসতে শুরু হয়েছে।সাথে এই বক্তব্য ও নানা ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হচ্ছে সরকার মার্ফত কয়লা খনি হলে চাকরি হবে,সরকারি রেভিনিউ বাড়বে ইত্যাদি।এক ই স্বর SUCIC এর কন্ঠেও।সরকারি দালাল হয়ে এই বক্তব্য ই তারা জনগনকে তাদের দীর্ঘদিনের সরকার বিরোধী অবস্থানের লোক দেখানো মহিমা দিয়ে বোঝাতে চাইছে গভীর চক্রান্ত করে।কয়লা খনি গড়া নিয়ে তাদের আপত্তি নেই।মানে সম্মতি আছে।সাথে দাবী এটুকু ই সরকার কয়লা খনি চালাক এবং এক ই সাথে বনাঞ্চল বাদ দিয়ে কয়লা উত্তোলন করুক।এই দাবী অনেকটা মশা আঁটকে হাতিকে প্রবেশের অনুমতি প্রদানের মতন ই বিষয়।কয়লা খনি সরকার করুক না করুক।এই প্রকল্প সরকার বনাঞ্চল রক্ষা করে করুক না করুক তার চেয়ে বড় বিষয় কয়লা খনি আদতে আজকের দিনে করার প্রয়োজনীয়তা কি? দুঃখজনক এ বিষয় শুধু SUCIC নয় অনেকেই গতে বাঁধা দুই লাইন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেউ খনির পক্ষে কেউ বা বিপক্ষে। এবং দু লাইন ই ধোঁয়াশা রক্ষা করছে।এক লাইন বলছে কয়লা খনির পক্ষে।শিল্পের দোহাই দিয়ে কর্ম সংস্থানের দোহাই দিয়ে।আর এক পক্ষ বলছে আদিবাসীদের উচ্ছেদ রোখা ঠেকাতে। অবশ্যই আদিবাসীদের উচ্ছেদ রক্ষা একটা বড় ইস্যু সাথে কর্ম সংস্থানের প্রশ্ন ও একটা বড় ইস্যু।তাহলে দু পাল্লাই আপাত দৃষ্টিতে প্রায় সমতুল্য পর্যায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে উভয় সমস্যা নিয়েই সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি রক্ষা করেই সমাজ প্রগতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান গ্রহন জরুরি।

এখন দেখা যাক কয়লা খনির সমস্যা কোথায়?

১)আদিবাসী উচ্ছেদ সমস্যা।
২)কয়লার পরিমান বিশ্বে সীমিত‌।কয়লা খননের গতি অনুযায়ী আর ২০০ বছর আমরা প্রাকৃতিক কয়লা পৃথিবীতে পেতে পারি।অন্য জ্বালানির কাজে ব্যাবহৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানগুলো ও মোটামুটি উত্তলোনের হার অনুযায়ী বিশ্বে অস্তিত্ব ২০০ বছরের মধ্যেই।ভালো জ্বালানি।কিন্তু সীমিত জ্বালানি।তাই এর বিকল্প এখন থেকেই না ভেবে উপায় নেই।কয়লা দীর্ঘদিন ধরে ভূ পৃষ্ঠের চাপ ও তাপে প্রাকৃতিক নিয়মে উৎপন্ন হয়েছে এবং হচ্ছেও।এর বিকল্প ল্যাবটারিতে স্বল্প মূল্যে সম মানের উৎপাদন করা এখন ও সম্ভব হয়নি।আবার এখন প্রতি বছর প্রাকৃতিক নিয়মে কয়লা উৎপাদনের হার যা তার থেকে কয়লার চাহিদা এবং উত্তোলন প্রতিবছর অনেক গুন বেশি হয়।ফলে কয়লার আয়ু পৃথিবীতে আর আল্প দিন।এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা অদূর ভবিষ্যতের জন্যে।তাই কয়লা নির্ভরতা কমানো আশু জরুরি।
৩)আবার কয়লা ব্যাবহারের ফলে উৎপাদিত দূষন ও জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ব্যাপক ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায় দূষনের হার বৃদ্ধি করে। পরিবেশের ভারসাম্য ও নষ্ট করে।এ প্রসঙ্গে ANI এর একটি রিপোর্ট তুলে দিলাম।"New Delhi [India], September 30 (ANI): A recent study shows that the number of premature deaths due to coal-fired thermal power plant pollution has increased by 60 per cent in cities including Kolkata, Chennai, Mumbai, Delhi/NCT and Bengaluru".[ANI Link:- https://www.aninews.in/news/national/general-news/coal-power-plant-pollution-in-india-could-lead-to-additional-premature-deaths-in-6-cities-study20210930203020 ঐ রিপোর্টে আর ও বলা হয়েছে,"The study was done by 'C40 Cities', a network of the world's megacities committed to addressing climate change.
Among all the five cities the study shows that West Bengal's Kolkata has seen 2,200 premature deaths due to coal power plants in 2019." রিপোর্ট দেখলে পরিষ্কার কতটা ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করছে কয়লা।এখানেই শেষ নয় এই রিপোর্টে আর ও বলেছে,"Dr Rachel Huxley, Head of Knowledge and Research at 'C40 Cities' said, "Current national plans would expand the coal fleet by 28 per cent between 2020 and 2030 and not reducing it by 20 per cent, threatening the health and well-being of the urban residents in Delhi while undermining India's climate and air quality targets."
She further stated, "Current national plans could nearly double the number of annual premature deaths from coal power plants air pollution in the city."এগুলো পড়লে বোঝা যায় কয়লার ব্যাবহার কতটা ক্ষতিকর ও বিপদজনক জনস্বাস্থ্য রক্ষায়।কলকাতায় এর প্রভাব ও উদ্বেগের বিষয়।যা মৃত্যু হার বাড়াচ্ছে।আমরা অতীতে দেখেছি ভূপাল গ্যাস দূর্ঘটনা।শিল্প চাই কর্ম সংস্থান চাই এটা মেনে নিলেও এটা কি আমরা বলি আমরা ভূপাল গ্যাস দূর্ঘটনা চেয়েছি!আমরা কি চাই কয়লার জন্যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মৃত্যু হার বাড়ুক!করোনার জন্যে যে দেশ মাসের পর মাস লকডাউন করে দেশের জনগনকে গৃহবন্দি করতে পিছপা হয়নি সে দেশ কি করে এতো সহজে কয়লার বিপদ নিয়ে উদাসিন ভূমিকা গ্রহন করতে পারে?তাহলে বোঝাই যায় করোনার লকডাউন আদতে কৃত্রিম সংকট তৈরি ছাড়া কিছুই ছিলো না।আর কয়লা নিয়েও নতুন খনি গড়ার সখ ও আদতে শিল্প বা কর্মসংস্থান নয় জনগনকে হত্যা করে হলেও জেনো তেনো প্রকারেনো লুটের রাজত্ব কায়েম রাখার অপচেষ্টা।
৪)নতুন কয়লার খনি হলে ভূ- পৃষ্ঠ থেকে প্রচুর কয়লা উত্তোলন হবে।আর তার যেয়গায় শূন্য স্থান পুরোন হবে বালি দিয়ে‌।এই বালি দিয়ে করা শূন্যস্থান আগামী দিনে দুটি বিপদকে আলিঙ্গন করবে নিশ্চিত ভাবে।একটি ভূমিকম্পকে আমন্ত্রন এবং দ্বিতীয়টি বালি উত্তোলনের ফলে নদীতে ধ্বস নামার পরিমান বৃদ্ধি পাওয়া।কারন এই বালি সংগ্রহ হয় নদীর পাড় থেকে।এর দায় কি সরকার নেবে?নেবে না।বড়জোর সাহায্যের নামে আর ও কিছু দূর্নীতির জন্ম দেবে।অতীতে যা করেছে জনগনের ট্যাক্সের টাকার শ্রাদ্ধ করে।আর তারপর বলবে কর আদায় হচ্ছে না ঠিক করে!ভারি শিল্প চাই!তাই আবার কোথাও কয়লা ,কোথাও তেল,কোথাও ইউরেনিয়াম খনি খোঁজা হবে জনগনকে নাকাল করতে।আবার রেভিনিউ, শিল্প ও কর্ম সংস্থানের অযুহাতে বাড়বে দূষন।মরবে মানুষ।এ দায় সরকার ও নেবে না। SUCIC এর সরকারি স্পনশর্ড নেতারা নেবে?নেবে না কেউই। সাধারণ জনগন ই গৃহহীন হবে।আদিবাসীরাই শুধু গৃহহীন হবে না।এর সাথে সাথে আর ও বহু মানুষের গৃহ হারা হবার রাস্তাও উন্মুক্ত হবে।আবার কয়লা খনিতে শূন্যস্থান ভরাট করতে বালি দিয়েও ভূকম্পন প্রতিরোধ সম্ভব নয়।তাই শুধু নদী ভাঙ্গনে বাস্তু হারা মানুষের হাহাকার শোনা যাবে তাই নয় এর সাথে সাথে ভূকম্পনেও বহু মানুষের হাহাকার আমরা শুনতে পারি।বিশেষত দেউচায় আন্ডার গ্রাউন্ড কয়লা খনি হবার ফলে এই সম্ভাবনা ভবিষ্যৎ এ আর ও বেশিই থাকবে।এর সাথে পরিবেশের ক্ষতির প্রভাবে স্লো পয়সেনিংয়ের মতন বহু মানুষ এটা না বুঝেই মরবে কয়লা খনির দূষনের প্রভাবেই তাদের মরতে হলো।
৫)দেউচার মোট কয়লা এবং সেই কয়লা থেকে উৎপাদিত দূষন এবং তার সমগ্র ক্ষতিকারক প্রভাব আমরা যদি একত্রে ক্যালকুলেট করি আর তার সাথে দেউচা খনি থেকে আশা সম্ভাব্য সরকারি রেভিনিউ এবং লাভগুলো একত্রে ক্যালকুলেট করে তুলনামূলক করি তাহলেই এটা পরিস্কার হবে দেউচা আদতে কতটা ক্ষতিকর ?এই হিসাব নিয়ে উপযুক্ত গবেষনা ছাড়াই এগোনোর অর্থ আগুনে ঝাঁপ দেওয়া ছাড়া আর অন্য কিছুই নয়।
        ভারতীয় পুঁজিবাদের চরিত্র মার্কিন পুঁজিবাদ বা ইউরোপীয় পুঁজিবাদের চরিত্রের মতন নয়।পার্থক্য আছে।আমেরিকা অন্য উন্নয়নশীল পুঁজির দেশগুলোর সম্পদ লুটে খায় এবং নিজের দেশের খনিজ সম্পদ সুরক্ষিত রেখে নিজের দেশকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করে।আর ভারতের মতন উন্নয়নশীল পুঁজির দেশ গুলো নিজেদের সব সম্পদ শেষ পর্যন্ত নিঙড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে জেনো তেনো প্রকারেনো।আর তা বাজার জাত করে লাভবান হবার চেষ্টা করে।তাই ভারতীয় পুঁজিবাদ এক অর্থে নির্বোধ লোভি।আর মার্কিন পুঁজিবাদ সে অর্থে বুদ্ধিমান লোভি।এই পার্থক্য থাকায় ভারতের পুঁজিপতিরা এখন দেউচা কে তাদের লক্ষ্য বানাতে চাইছে এ বিষয় কোন ও সন্দেহের অবকাশ নেই।আবার এটা হলে স্থানীয় মাফিয়া রাজ ও উৎসাহিত হবে সেজন্য তাদের ও লেজুড়বৃত্তি করতে সঙ্গে জুটিয়েছে ভারতীয় পুঁজিপতিরা।দেউচায় কয়লা খনি হলে লাভ হবে স্থানীয় বালি মাফিয়া ,কয়লা মাফিয়াদের। তাই তারা ও কোমোর বেঁধে নেমেছে আদিবাসী উচ্ছেদে।আবার জনগনের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা পাবার লালসায় রাষ্ট্রীয় স্পন্সর্ড এক বাম দলকেও সরাসরি নামিয়ে দেওয়া হয়েছে জনগনকে ভ্রান্ত ধারনা দ্বারা প্রভাবিত করতে।যাদের বড় স্বাস্থ্য ব্যাবসা ও চলে সরকারি অর্থানুকুল্যে।তাই সেই টোপকে ব্যাবহার করেই তাদের নিজেদের বশংবদ করে তুলে নিজেদের কাজে ব্যাবহার করছে রাষ্ট্র।
৫)করোনা,ইয়াস,আমফান এবং অকাল বর্ষনের ব্যাপক ক্ষতি থেকে সরকার ও শেখেনি এবং জনগন ও শেখেনি।তাই সরকার দেউচার কয়লা খনির জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে আবার সাধারণ জনগন ও এটা বুঝতে ব্যার্থ হচ্ছে এ সমস্যা একা দেউচার কিছু আদিবাসীদের সমস্যা নয়।এটা তাদের ও সমস্যা।দেউচার কয়লার ক্ষতিকর প্রভাব কেবলমাত্র আদিবাসীদের উপরে পড়বে আর বাংলার কোন ও মানুষের উপর পড়বে না তা নয়।সবাইকেই এর ভাগ নিতে হবে।আর ও নানা ভাবি প্রাকৃতিক দূর্যোগকে আমরা আমন্ত্রন জানাবো যদি দেউচা হয়।তাই এর বিরুদ্ধে সারা বাংলা জুড়ে ব্যাপক জনমত গঠন প্রয়োজন।আমরা চাই না বাংলার ভবিষ্যৎ সাময়িক কিছু লোভের আশায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কেই নিজেদের ভবিষ্যৎ বানিয়ে নেয়।CPM নেতাদের ও নিজেদের বক্তব্যের অসঙ্গতি দূর করা দরকার এবং একটা দায়িত্ব শীল বাম দল হিসাবে ভূমিকা গ্রহন প্রয়োজন।যদি তাদের সদিচ্ছা থাকে।সেদিক থেকে দেখলে কর্ম সংস্থান অবশ্য ই ভবিষ্যৎ করা দরকার তাই শিল্পের বিকাশ ও ভবিষ্যৎ করা দরকার এ বিষয় কোন ও সন্দেহ নেই।কারন শিল্প ই একটা বড় মাধ্যম হিসাবে বিগত কয়েক শতকের ইতিহাসে কর্ম সংস্থানের অগ্রগতিকে নিয়ন্ত্রন করেছে।কিন্তু এর সাথে এটা ভুললে চলবে না অতীতে যে সমস্যা সীমাহীন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়নি আজ সে সমস্যা সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।সেটা হলো পরিবেশ দূষন।
যার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন হচ্ছে। বিশ্বের গড় উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পেয়েছে।মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে।তাই ভারি শিল্প আজ ও সভ্যতার অগ্রগতিতে অপরিহার্য হলেও পরিবেশ বান্ধব শিল্প আজকে সভ্যতা বিকাশে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।তাই ভারি শিল্পের নাম করে কর্ম সংস্থানের দোহাই পেড়েও আজ পরিবেশ বিরোধী শিল্পের লক্ষ্যে পা বাড়ানো আত্মহত্যার নামান্তর।সরকার চাক না চাক ভারতীয় পুঁজিবাদ চাক না চাক সমাজ সচেতন ,সভ্যতা সচেতন সমাজ প্রগতির ধারক বাহকদের এটা না চেয়ে কোন ও উপায় নেই যে পরিবেশ বান্ধব শিল্প দরকার।তাই পরিবেশ বান্ধব শিল্পের বিকাশ হোক,এটা  না হলে শিল্পের বিকাশের নামে পরিবেশ দূষনের সংস্কৃতি যতটা বন্ধ করা যায় তাই করা হোক বিকল্পের সন্ধান করতে করতে।মানুষ এক কালে জংলি জীব জন্তুর হাত থেকে বাঁচতে আগুনের ব্যাবহার যেমন শিখেছে তেমন ভারি শিল্পের বিকল্প ও সভ্যতার অগ্রগতির প্রয়োজনে মানুষ বার করে নিতে পারবে এ বিষয় সন্দেহের অবকাশ নেই।আর সেই লক্ষ্যে আসন্ন বিপদ নিয়ে সচেতন হয়ে রিস্ক নিতেই হবে।তাই শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ এমন গোল গোল কথা বলে ভারতীয় মুমুর্ষু ও ঘৃন্য পুঁজির দালালি ছেড়ে একথা জোরের সাথে বলতে হবে কর্ম সংস্থানের লক্ষ্যে বিকল্প পরিবেশ বান্ধব শিল্পই আমাদের ভবিষ্যৎ।এ বিষয় নিজেদের বক্তব্য পাল্টাতে হবে CPM কে।গন আন্দোলনের কর্মীদেরও এটা বুঝতে হবে শুধু পরিবেশের দোহাই দিয়ে সমস্ত শিল্পের বিরোধীতাও এক সময় ব্যুমেরাং হতে পারে। দাবীর নেয্যতা থাকা সত্ত্বেও এই দাবীই একদিন কর্মসংস্থানের চরম হাহাকারের মুহূর্তে জনগন লালসা বৃত্ত হয়ে গ্রহন করে ফেলতে পারে। তাই এর সাথে সাথে বিকল্পের কথাও বলতে হবে। তবে দাবী আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

এখন বিকল্প কি?

বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে ক্লিন এনার্জির দাবীতে আন্দোলন হয়ে গেছে।ভারতে পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন হলেও ক্লিন এনার্জির দাবীতে আন্দোলন সেরকম হয়নি।
        যখন দূষনের এতো মারাত্মক প্রভাব ও ছিলো না তখন অর্থাৎ আজ থেকে ৭০-৮০ বছর আগেও সোভিয়েতে স্ট্যালিনের নেতৃত্বে ম্যান মেড জঙ্গল তৈরি করা হয়।পরে তার আয়তন ও বৃদ্ধি করা হয়।আবার কিউবা তে ফিদেলের নেতৃত্বে কৃষিতে জৈব সার ব্যাবহার ই অব্যাহত রাখা হয়।পরিবেশ বান্ধব কৃষির ব্যাবহার ই সে দেশে কৃষি নির্ভর জনগনের গড় আয়ু ৯০ এর কাছাকাছি নিয়ে গেছে।সাথে উন্নত চিকিৎসা ব্যাবস্থা।পরিবেশকে রক্ষা করেই চলেছে সে দেশের বিকাশ মার্কিন এম্বার্গোর কোপ সামলে।আবার ৫০-৬০ বছর ধরে বিকল্প শক্তির সন্ধান করতে বিশ্বজুড়ে চলেছে ব্যাপক গবেষণা।সোলার টেকনোলজি এসেছে।তার কিছুটা অগ্রগতি ও হয়েছে।পলিক্রিস্টাল ছেড়ে এখন মনো ক্রিস্টালে পা রেখেছে সোলার।সোলার প্যানেলের সর্বোচ্চ এফিসিয়েন্সি পেতে হাফ কাট মনোক্রিস্টাল সোলার প্যানেল ও বাজার জাত হয়েছে।আবার বাইয়েফিসিয়াল হাফ কাট মনোক্রিস্টাল সোলার প্যানেল ও বাজার জাত হয়েছে সোলার রেডিয়েশানকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক ব্যাবহারের জন্যে।স্তরে স্তরে উন্নত ও হয়েছে টেকনোলজি।তাই বিকল্প শক্তির উৎসর বয়স কম হলেও বিকাশ যে হয়নি বা হচ্ছে না তাও নয়।তবে প্রকৃতিগত কারনে এগুলোর অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।যেমন নিরক্ষরেখার কাছাকাছি সোলারের এফিসিয়েন্সি সবচেয়ে বেশি।এখানে সূর্য লম্ব ভাবে ভূপৃষ্ঠে পড়ে।তাই সোলার রেডিয়েশান এখানে বেশি মেলে।আবার নিরক্ষরেখার আশেপাশে জলভাগ  বেশি।তাই সমুদ্রেও সোলার প্যানেল ইনস্টলের প্রচেষ্টা করতে হচ্ছে।তবে সেখানেও কিছু অসুবিধা থেকে যাচ্ছে যেমন সমুদ্রের নোনা জলের প্রভাব।এগুলো প্যানেলের উপর পড়ে প্যানেলের কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে।এরকম নানা সমস্যা থাকলেও তার সমাধানের জন্যে গবেষণা ও চলছে।এই প্রকৃতিগত কারনেই ভারতের মধ্যে গুজরাট, রাজস্থান,হরিয়ানা,সাইথ ইন্ডিয়ার রাজ্যগুলো সোলার ইন্সটলেশানে যতটা সুবিধা পায় ততটা সুবিধা আবার পশ্চিমবঙ্গ পায় না।কারন পশ্চিমবঙ্গে ৪-৫ মাস ভারি বর্ষা থাকে।সূর্যের তাপ ও প্রতি যেয়গায় এক নয়।তাই পশ্চিমবঙ্গে একটা প্রকৃতিগত সীমাবদ্ধতা আছেই এ বিষয়।তাহলে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিকল্প কি হতে পারে?এ বিষয় আমরা বায়োমাসের দিকে লক্ষ্য দিতে পারি।যার সাথে সূর্যের বিশেষ সম্পর্ক নেই।তবে প্রকৃতির সুবিধা নিশ্চিত আছে। পশ্চিমবঙ্গে কৃষির হার যথেষ্ট ভালো।ব্যাপক ধান চাষ হয়।অতীতে পাট কে ব্যাবহার করতে হুগলিতে শিল্পাঞ্চল ও গড়ে ওঠে।ফলে কৃষিকে ব্যাবহার করে শিল্পের বিকাশের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে নতুন নয়।বায়োমাসের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত রসদ হলো এই কৃষিজ বজ্র পদার্থ। পশ্চিমবঙ্গে ধানের ব্যাপক উৎপাদন হয়।আর ধান থেকে খড় ও তুষ আমরা পাই।যেগুলো বায়োমাস এনার্জি প্রোডাকশানে মূখ্য ভূমিকা নিতে পারে।আগে এই খড় তুষের একটা বড় ব্যাবহার ছিলো গ্রামাঞ্চলে পশু পালনে।এখন ট্রাক্টর এসে যাওয়ায় পশুকে কৃষিতে ব্যাবহার কমেছে।আবার পশু পালন খরচ সাপেক্ষ ও হয়েছে।তাই গ্রামাঞ্চলে ও পশুপালনের হার কমেছে।আবার মাটির ঘর ছাওয়ার কাজে খড় ব্যাবহৃত হতো।সরকারি ঘর পাওয়ার সুবাদে এখন গ্রামাঞ্চলে ও মাটির খড় দিয়ে ছাওয়া বাড়ির পরিমান কমেছে।ফলে খড় এখন উদ্বৃত্ত হচ্ছে বহু ক্ষেত্রে।শুধু এই নয় হুগলির ব্যাপক অংশে উর্বর ত্রিফসলা জমিতে হার্ভেস্টার ট্রাক্টর ব্যাবহার করায় এখন ধান ঝাড়ার সময়,শ্রম ও খরচ অনেক কমেছে।কিন্তু হার্ভেস্টার মেশিনে কাটা খড় ব্যাবহার যোগ্য থাকছে না।তাই এগুলো কে চাষিরা পুড়িয়ে ফেলছে।এতে দূষনের মাত্রা বাড়ছে।এগুলো অনায়াশে বায়োমাস এনার্জি প্রোডাকশানের জন্যে ব্যাবহার করা যেতে পারে।এতে কৃষকরাও লাভবান হবে।কৃষি ও শিল্পের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সমন্বয় গড়ে উঠবে।এছাড়া বায়োমাস উৎপাদনে কর্পোরেশান বা মিউনিসিপ্যালিটির গৃহস্থলির বজ্রগুলো ও ব্যাবহৃত হতে পারে।প্রতি কর্পোরেশান বা মিউনিসিপ্যালিটিতে অনায়াসে একটা করে বায়োমাস প্ল্যান্ট গড়ে অনেকটা বিদ্যুৎ এর যোগান দিয়ে প্রচলিত শক্তির উপর নির্ভরতা কমানো যায়। এক্ষেত্রে পাবলিক টয়লেট ও ব্যাবহার করা যেতে পারে।শুধু এই নয় বায়োমাস প্রক্রিয়ায় শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তাই নয় এর সাথে জৈব্য সার বায়ো চার ও উৎপাদন হয়।যেটা কৃষকরা ব্যাবহার করতে পারে স্বাস্থ্যকর কৃষির জন্যে।ইতিমধ্যেই কৃষিতে রাশায়নিক সারের ব্যাবহার ব্যাপক দূষন ও ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।হুগলির তারকেশ্বরে কৃষিজীবী মানুষদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা অত্যাধিক হারে বাড়েছে।এরকম আর ও নানা যেয়গায় বেড়েছে।এগুলো ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বায়োচারের ব্যাবহার বাড়লে।এ ছাড়া বায়োমাস থেকে বায়ো কোল তৈরি হয়। যেটা কে শ্বেত কোল ও বলে থাকে।যেটার বিশেষত্ব হলো কয়লা খনি থেকে উৎপাদিত কোলের তুলনায় এই কোলে সালফারের মাত্রা অনেক কম থাকে।দূষন ও অনেক কম হয়।জ্বালানি হাসাবে এর ব্যাবহার ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হচ্ছে।সদ্য উত্তরপ্রদেশের রিশিয়া তে একটা বায়ো কোল প্ল্যান্ট ও স্থাপিত হয়েছে। (বায়ো কোলের বিষয় বিষদ বিবরনের একটা লিঙ্ক তুলে দিলাম- https://youtu.be/I39fYJ3Hg6I ) পশ্চিমবঙ্গে বায়ো মাস এনার্জি প্রোডাকশানের জন্যে দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার গোসাবায় WEBREDA ইতিমধ্যেই কিছু বায়োমাস প্ল্যান্ট বানিয়েছে গোসাবা,ছোট মোল্লা খালি,হেড়েম্বপুর গোপালপুরে।এই সবকটি প্ল্যান্ট যথাক্রমে ৫০০,৫০০ এবং ৪০০ কিলো ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন।যেখান থেকে সর্বোচ্চ আয় সাড়ে তিন লাখ টাকা গোসাবা প্ল্যান্ট থেকে করে প্রতি মাসে WEBREDA।এই তিনটি প্ল্যান্ট মিলিয়ে ১৬২৫ গ্রাহক আছে।এটা WEBREDA এর অফিসায়াল ওয়েব সাইটের তথ্য বলছে।তাই বায়োমাস এনার্জি প্রোডাকশান লাভজনক উৎপাদনে পরিনত হচ্ছে না তা নয়।তবে এই টেকনোলজি আপগ্রেটের প্রচেষ্টার খামতি হচ্ছে এটা নিশ্চিত।এজন্যে সরকারি অবহেলাই মুখ্যত দায়ি।বায়ো মাস প্ল্যান্ট বাম জামানার পর তৃনমূল জামানায় তৈরিই হয়নি আর পশ্চিমবঙ্গে।অন্তত WEBREDA এর তথ্য তাই বলছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে ক্লিন এনার্জির দাবীতে আন্দোলন হয়েছে।আর সেই চাপে বহু দেশ প্রথম দিকে না ভাবলেও পরে বিকল্প শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে ঝাঁপ দিয়েছে। দুঃখজনক এ দেশে পরিবেশ আন্দোলন হলেও রাজনৈতিক মঞ্চ গুলো কখন ও ক্লিন এনার্জির দাবী তুলেছে এটা সেভাবে সামনে আসেনি।দেউচার বিরোধীতা করতে গিয়ে সাথে সাথে ক্লিন এনার্জির দাবী তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের বক্তব্যে রিনিয়েবেল এনার্জি প্রসারের কথা বললেও বাস্তবে তার স্বরুপ সর্বত্র সদর্থক নয়। (লিঙ্কে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের রিনিউয়েবেল এনার্জির বিকাশ নিয়ে সিদ্ধান্তের রিপোর্ট তুলে দিলাম- https://www.newindianexpress.com/cities/kolkata/2018/aug/20/west-bengal-government-promoting-renewable-energy-sources-cm-mamata-banerjee-1860257.html সম্প্রতি এ রাজ্যে সরকারি  স্কুলগুলোকে সোলারাইজড করার একটি বড় সরকারি প্রোজেক্টে কাজ করছিলো এক্সাইড ও ক্লোরাইডের মতন দুটি বড় কম্পানি। প্রোজেক্ট শেষ হলেও পেমেন্ট আঁটকে দেওয়ায় এক্সাইড তার সোলার ডিভিশানের ৭০ জন ইঞ্জিনিয়ার কে ছাঁটাই করে।এখন প্রোজেক্টের টাকার বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন।এই তো অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের রিনিউয়েবেল এনার্জির!শুধু এই নয়।১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গ তথা নর্থ ইস্টের রিনিয়েবেল এনার্জি নিয়ে গবেষণা ও পঠন পাঠনের সবচেয়ে পুরানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনার্জি স্টাডিস ডিপার্টমেন্টে এখন ও দুজন অধ্যাপকের শূন্য স্থান দীর্ঘদিন থেকে পুরোন না করে ফেলে রাখা হয়েছে।শুধু এই নয়।আমফান ,ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাবোটারি ও এখন ও পর্যন্ত সরানোর বন্দোবস্ত টুকু ও করেনি।কার্যত অবহেলার মধ্যে দিয়ে সরকার ফেলে রেখেছে এই ডিপার্টমেন্টকে।এই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র হিসেবে সরকারি অবহেলার চরম কিছু নিদর্শন চাক্ষুষ করার দূর্ভাগ্য আমার হয়েছে।তাই আমি জানি।আবার মোদী সরকার আন্তর্জাতিক কিছু চাপ থেকে কিছু দিন রিনিউয়েবেল এনার্জির গ্রোথের চেষ্টা চালালেও সম্প্রতি সোলার প্যানেলে ১২% GST বসিয়ে দিয়েছে।একটা উন্নয়নশীল শিল্পকে শৈশবেই গলা টিপে মারার চেষ্টা সরকার ই করছে। (লিঙ্ক- https://youtu.be/ZoKpfKDI9zU) এ নিয়ে টু শব্দটিও শোনা যায়নি।এক দিকে পেট্রোল ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি অন্য দিকে বিকল্প শক্তিতে ও গলা কাটা শুরু। মানুষ যাবে কোথায়?এই তো অবস্থা?দুই সরকার পাল্লা দিয়ে বিকল্প শক্তির সম্ভাবনা সৃষ্টির বদলে তাকে হত্যার প্রয়াস ই করে চলেছে নিরলশ ভাবে।এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো অদ্ভুদ ভাবে নিরব থেকেছে।বারাবর ই নতুন টেকনোলজি বিকশিত হবার পথে যেকোন ও দেশের সরকার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অনুঘটকের মতন কাজ করে। এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের ভূমিকা ভিন্ন।মুখে এক কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে তাদের চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।দেউচা কয়লা খনি বন্ধের দাবী তোলা এবং তাকে জোরালো করার পাশাপাশি ক্লিন এনার্জির বিষয় ও জোরের সাথে আওয়াজ তোলা দরকার।
    জল শক্তি,জিও থার্মাল এনার্জি,উয়িন্ড এনার্জির মতন বিকল্প শক্তিগুলো প্রকৃতিগত কারনে সর্বত্র প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।কিন্তু সোলারের কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনেকটা করা যায় ব্যাবহার।বায়োমাস ও করা যায়।আর পশ্চিমবঙ্গে সোলার ও বায়োমাসের সমন্বয় ঘটিয়ে বিকল্প শক্তি উৎপাদনের মধ্যে দিয়ে শক্তির চাহিদা অনেকটা মেটানো সম্ভব পরিকল্পনা মাফিক অগ্রগতি করলে। এক্ষেত্রে কৃষি ও লাভবান হবে।আর সেটা হলে কৃষি ছেড়ে কৃষকদের অন্যত্র কাজ খুঁজতে হবে না।আবার কৃষি জমিও সহজে সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের উৎসে সহজে পরিনত ও হতে পারবে না।সব দিক থেকে একটা সমতা রক্ষিত হবে, পরিবেশের ভারসাম্য ও রক্ষিত হবে। ইতিমধ্যেই সোলার এনার্জি কে বড় শিল্প ক্ষেত্রের উপযোগি করতে পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের ব্যাবহার ও হচ্ছে যথেষ্ট।খড়গপুরে টাটা হিতাইচি এর একটা বড় নিদর্শন।যেখানে চেঞ্জ ওভার ব্যাবহার করে ক্লিন এনার্জি ও নেওয়া হয় সোলার থেকে আবার প্রচলিত বিদ্যুৎ শক্তিও গ্রহন করা হয় প্রয়োজনে।এতে প্রচলিত শক্তির উপর নির্ভর শীলতাও কমানো গেছে অনেকটা।এভাবে সর্বত্র ই এক দিনে না হোক ধিরে ধিরে প্রচলিত শক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।আর সে লক্ষ্যেই সরকারকে পরিচালিত করার দিকে জনগনকে চাপ দিতে হবে।তাই এই নতুন টেকনোলজি নিয়ে জনগনকে সচেতন করে গন আন্দোলনের রাস্তায় সমাজ কর্মীদের ই নামাতে হবে।তাই তাদের ও আগে এ বিষয় সচেতন হওয়া দরকার।আর এটা হলেই দেউচার বিরোধীতায় তোলা দাবী আর ও ধারালো হবে।এটা বুঝিয়ে দেওয়া যাবে কর্মসংস্থান ও শিল্পের বিকাশের বিকল্প রাস্তা দেখিয়েই দেউচা কয়লা খনি বন্ধ করা দরকার পরিবেশের আশু সুরক্ষার জন্যেই।এ অপবাদ ও এর সাথে ঘুচিয়ে দেওয়া যাবে আন্দোলন মানেই শিল্প বিরোধীতা ,কর্ম সংস্থানের বিরোধীতা নয়।এর মূল উদ্দেশ্য পরিবেশ রক্ষায় সর্বোচ্চ আন্তরিকতা প্রদর্শন।


Post a Comment

0 Comments