তেহট্ট সাব জেলে কুড়ি দিনের মধ্যে একই পরিবারের দুই ভাইয়ের হেফাজত মৃত্যু নিয়ে এপিডিআর এর তথ্যানুসন্ধান রিপোর্ট
গত 16/02/22 তারিখ বেলা বারোটা নাগাদ তেহট্ট সাব জেলে বিচারাধীন বন্দীর মৃত্যু ঘটে। মৃতের নাম -বাসুদেব মন্ডল (51), পিতা- বলরাম মন্ডল, ঠিকানা - ফতাইপুর, বক্সীপুর, তেহট্ট, নদিয়া। পরিবারের পক্ষ থেকে মৃতের ভাই ননীগোপাল মন্ডল জানান একটি খুনের ঘটনায় তাদের পরিবারের তিনভাই (একজন খুড়তুতো ভাই) ও তিন ভাইপো তেহট্ট সাব জেলে বিচারাধীন আছেন। গত 29/01 তারিখে তার অপর দাদা বিশ্বনাথ মন্ডল এই জেলেই মারা যান।তিনি জানান গতকাল সকালবেলা জেল থেকে তার ভাইপো তাকে ফোনে জানান বাসুদেব বাবু অসুস্থ বোধ করছেন। তাকে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর তারা তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেলা বারোটা নাগাদ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। ননীগোপাল বাবু জেলে বন্দী ভাইপোদের কাছে জানতে চান সকাল থেকেই তার দাদার শারীরিক কোনো অসুবিধা ছিল কিনা। এবং জানতে পারেন প্রতিদিনের মতো গতকাল ও তার দাদা জেলের মাঠে খেলাধূলা করেন। তারপর স্নান সেরে খাবারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তিনি জানান তার বুকে একটা ব্যথা করছে। ভাইপোরা তখন জেল কর্তৃপক্ষকে জানালে তাকে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এক ঘন্টার ও কম সময়ে তার মৃত্যু ঘটে। কুড়ি দিনের মধ্যে এক ই জেলে এক ই উপসর্গ নিয়ে দুই দাদার কেন মৃত্যু ঘটল এই বিষয়টা তাদের কাছে সম্পূর্ণ ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। এপিডিআর এর তথ্যানুসন্ধান দলকে তারা জানান, জেলে যাওয়ার সময় তারা প্রত্যেকেই সুস্থ ছিলেন। বিশেষত, বাসুদেব বাবু নিয়মিত শরীর চর্চা করতেন। কুড়ি দিন আগেই তার এক দাদার এই জেলেই মৃত্যু হয়। তার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখন ও তারা পাননি। এক দাদার মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক দাদার মৃত্যুর ঘটনা তাদের স্তম্ভিত করেছে। তিনি আরো জানান, তেহট্ট থানা থেকে 17/02/22 তারিখ মৃতদেহ শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে আসা হয়। কিন্তু পরিবারের লোকের অনুপস্থিতিতেই সুরতহাল করা হয়। উপরন্তু তেহট্ট থানা থেকে মৃতদেহ আনার জন্য থানার পক্ষ থেকে কোনো শববাহী গাড়ি দেওয়া হবেনা বলে জানানো হয়।বলা হয় তারাই যেন গাড়িভাড়া করে মৃতদেহ নিয়ে যায়।এইসময় পরিবারের আত্মীয়রা আপত্তি জানান এবং প্রতিবাদ করে বলেন, থানা যদি শববাহী গাড়ীর ব্যবস্থা না করে তাহলে তারা মৃতদেহ নেবেননা। পরবর্তীতে থানার পক্ষ থেকে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ময়না তদন্তের সময়ে সরকারি আইনবিধি ভঙ্গ করেই সুরতহাল সম্পর্কে পরিবারকে অন্ধকারে রাখা হয়।
উক্ত ঘটনায় এপিডিআর দুই বিচারাধীন বন্দীর জেল হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাকে তীব্র নিন্দা করছে। যেভাবে একের পর এক হেফাজত মৃত্যুর ঘটনা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে তা জেলগুলিতে বন্দীদের নূন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত থাকছেনা বলে এপিডিআর মনে করছে।
এই ঘটনায় এপিডিআর কৃষ্ণনগর শাখা দাবি করছে:-
1) অবিলম্বে সমস্ত সাব জেলে চিকিৎসক নিয়োগ করতে হবে।
2) মৃত বন্দীর পরিবারের অন্য সদস্যদের অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যেহেতু পূর্ববর্তী দুইজন বন্দীর কোনো পৃর্ব উপসর্গ ছাড়াই মৃত্যু হয়েছে তাই যারা এখন বন্দী আছেন উপসর্গ না থাকলেও তাদের ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
3) মৃত বন্দীদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
4) পরিবারের লোকেদের অনুপস্থিতিতে সুরতহাল করা হল কেন প্রশাসনকে তার জবাব দিতে হবে এবং ঐ সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের বিরূদ্ধে আইনানুগ শাস্তি দিতে হবে।
5) একই পরিবারের দুইজন বন্দীর কেন কুড়ি দিনের মধ্যে মৃত্যু হল তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে এবং অবিলম্বে বাকি বন্দীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন..
0 Comments