নদীয়া জেলার ভীমপুর থানা লকআপে বছর ৪৪ এর পেশায় শ্রমিক আব্দুল গনি শেখের হত্যার ঘটনায় গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি কৃষ্ণনগর শাখার বক্তব্য:
আজ সকালে আমরা জানতে পারি যে ভীমপুর থানায় লকআপে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। মৃত ব্যক্তির নাম আব্দুল গনি (জামাত) সেখ, পিতা রখিম সেখ, পানিঘাটা, স্কুলপাড়া, নদীয়া। আমরা জানতে পারি, মৃতদেহটি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে আছে। জানার পর শাখার পক্ষ থেকে আমরা জেলা হাসপাতালে যাই এবং হসপিটাল স্টাফদের কাছে জানতে পারি একটি মৃতদেহ ভীমপুর থানার পুলিশ রেখেই দ্রুত বেড়িয়ে যায়। তারপর মৃতের পরিবার কোতয়ালী থানায় আছে জানতে পেরে কোতয়ালী থানায় যাই। সেখানে মৃতের পরিবার ক্ষোভে ও দুঃখে ফেটে পড়েন। তারা জানান আব্দুল হরিয়ানায় মিস্ত্রীর কাজ করতেন। তার এইসময় বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও কবে আসবেন তা জানা ছিলনা। হঠাতই আজ ভোর তিনটের সময় কালিগঞ্জ থানার পুলিশ তাদের বাড়ি যায় এবং জানায় আব্দুলকে ভীমপুর থানায় গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং অসুস্থ থাকায় তাকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে আনা হয়েছে।
জানার পর সেইমাত্র তারা শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে আসার প্রস্তুতি নেন। ঠিক এর আধঘন্টা পরে আবার ও কালিগঞ্জ থানার পুলিশ জানায় আব্দুল মারা গেছেন। কিন্তু তাকে কবে, কোথায় এবং কেন গ্রেফতার করা হল এই বিষয়ে পুলিশ কিছুই তার পরিবারকে জানায়নি। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার সময় যে অ্যারেস্ট মেমো দিতে হয় এবং পরিবারকে জানাতে হয় সিআরপিসি এর এইসব ধারা প্রয়োগের কোনো প্রয়োজনবোধই ভীমপুর থানার পুলিশ করেনি। আব্দুল গনি শেখ আটককৃত অবস্থায় মারা যান এবং তার গ্রেফতারের কোনো খবরই তার পরিবারকে দেওয়া হয়নি । তাই এই ঘটনা সম্পূর্ণত ই হেফাজত হত্যা।
ভীমপুর থানার বিরূদ্ধে দুটি অভিযোগ মুলত আছে। এক) গ্রেফতারের খবর পরিবারকে জানানো হয়নি দুই) ভীমপুর থানার পুলিশই এই হেফাজত হত্যার ঘটনার জন্য দায়ি। ভীমপুর থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জাল নোট রাখার অভিযোগে আব্দুলকে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারের আধঘন্টার মধ্যেই তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। প্রশ্ন হল, পুলিশ মারা যাওয়ার কারণ জানলেন কি করে যখন হসপিটাল থেকে এমন কোনো তথ্য তখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি !!! এরপর আমরা কোতয়ালী থানায় যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি পোস্টমর্টেম রিক্যুইজিশন তৈরি হয়ে গেছে। আইসি কোতয়ালীর সাথে যোগাযোগ করে সুরৎহালের সময় আমরা উপস্থিত থাকতে চাই বলে জানাই। উনি সম্মতও হোন। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি শক্তিনগর হসপাতালেই। প্রায় দুই ঘন্টা পর কোতয়ালী থানা থেকে আব্দুলের পরিবারের লোকজন হসপাতালে আসেন। আমরা একসাথেই সুরৎহালের জন্য কোতয়ালী থানার কর্তব্যরত অফিসারের কাছে আবেদন জানালে তিনিও অসম্মত হননা। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর ডাক্তার অনির্বান জানার কাছ থেকে জানতে পারি তখন পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে। হ্যাঁ, তখনো আমরা মর্গের করিডরেই দাঁড়িয়েছিলাম। পরিবারের চারজনকে শুধুমাত্র আইডেন্টিফাই করানো হয়েছে ততক্ষণে। আমাদের ডাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও পুলিশ ডাকেনি।
এই ঘটনার আমরা প্রতিবাদ জানাই এবং আব্দুলের পরিবারের সাথেই দাবি তুলি এর প্রতিবাদে মৃতদেহ পরিবার নেবেনা। আমাদের পর্যবেক্ষণ, হেফাজত হত্যার এই পুরো ঘটনাটি খুব ঠান্ডা মাথায় ষড়যন্ত্রমুলকভাবে ঘটানো হয়েছে যার মুখ্য ভূমিকায় থেকেছে ভীমপুর থানার পুলিশ। ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে পুলিশ প্রশাসন আজ এতটাই মরিয়া যে মৃতের পরিবার এবং আমাদের মতো সাংগঠনিক কর্মীদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে পোস্টমর্টেম করা হয়েছে যাতে মৃত ব্যক্তির আঘাতের কোনো প্রমাণ সামনে না আসে। এপিডিআর কৃষ্ণনগর শাখা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে এবং অবিলম্বে দোষী পুলিশ অফিসারদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযোগ/ অপরাধ বিচার করার দায়িত্ব বিচারালয়ের। কিন্তু বিচারব্যবস্থা এবং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট দেখিয়ে যেভাবে পুলিশ প্রশাসন আজ এই ঘটনা ঘটালেন এবং ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে কৌশলী পন্থা নিলেন তা তাদের আইনরক্ষকের পরিবর্তে আইনভঙ্গকারীতে পরিণত করেছে। প্রশাসনের এই কাজ অত্যন্ত নিন্দনীয় যার সর্বস্তরে প্রতিবাদ হওয়া দরকার ।
0 Comments