জেল থেকে সাইবাবার চিঠি সহযোদ্ধা ভাসন্থ কুমারীকে

মুম্বাই হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ থেকে আজ অধ্যাপক জি এন সাইবাবা, পিপিএসসি-র প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত রাহি, সাংস্কৃতিক কর্মী হেম মিশ্র সহ পাঁচ জন বন্দীকে গড়চিরলি কেসে বেকসুর খালাস ঘোষণা করা হয়েছে।মাওবাদী অভিযোগে অভিযুক্ত এবং ইউএপিএ সহ একাধিক ধারায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রফেসর জি এন সাইবাবা ২০১৭ সালে জেলে বসে এই চিঠিটি লেখেন সহযোদ্ধা, স্ত্রী ভাসন্থ কুমারী-কে, তাঁর জন্মদিনে। বছর তিনেক আগে করা সাইবাবা-র এই চিঠির অনুবাদটি আজ মেহনতি. ইন-এ পুনঃপ্রকাশ করা হল। অনুবাদ: শৌভিক

প্রিয় ভাসন্থ (বসন্ত)

তোমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। আশাকরি এই চিঠিটা তোমার জন্মদিনের দিন পৌঁছেছে। আমি জানি এই দিনটায় আমার অনুপস্থিতি তোমার কতটা খারাপ লাগছে। রাষ্ট্র আমাদের পৃথক করার সংকল্প নিয়েছে। এমনকি রাষ্ট্র আমাদের শেষ করবারও সংকল্প নিয়েছে। আমাদের ২৬বছরের বিবাহিত জীবনে আমরা কেউ আমাদের ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য এবং উন্নতি নিয়ে ভাবিনি। আমাদের ৩৬ বছরের সাহচর্য শুধুমাত্র সমাজের জন্য কাজ এবং আশায় কেটেছে। এই প্রসঙ্গে, আমি এটুকু কেবল বলতে পারি তোমার আশায়ে অবিরত থাকা উচিত এবং আমার অনুপস্থিতিতে জনগণের অধিকারের জন্য কাজ করা উচিত। আমার কারাবাস এবং অনুপস্থিতি তোমাকে যেন নিরুৎসাহিত না করে। আজ তুমি তোমার জন্মদিনে আমাদের উপর চাপানো এই প্রতিকুলতা, এই বর্বরতা, এই হিংস্রতার মুখোমুখি হবার সংকল্প নিয়েছো।

এই মামলা, এই রায় এবং এই কারাবাস আমাদের জন্য কখনই লজ্জার নয়। রাষ্ট্রের এই কাজগুলিই গণতন্ত্রের জন্য লজ্জার। আমরা একটি উন্নত সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমরা নিপীড়িত মানুষ, দলিত, আদিবাসী, মহিলা, প্রতিবন্ধী সংখ্যালঘুদের নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য অসমতার অবসানের প্রত্যাশা করেছি। আমরা আমাদের মূল্যবোধে অব্যাহত থেকে সমাজে প্রকৃত গণতন্ত্র আনতে জনগণের প্রান্তিক শ্রেণীর উন্নতির জন্য কাজ করে গেছি।

তারা আমাদের এই আশা, এই স্বপ্নকে ভেঙ্গে চূর্ণ করার চেষ্টা করতে পারে কিন্তু তারা আমাদের এখনও দেখে চলা স্বপ্ন, হৃদয়ের সমস্ত আশাকে দমিয়ে রাখতে পারবেনা। এই মিথ্যা মামলা, মনগড়া রায় এবং আমাকে কারাগারে রাখার সন্দেহজনক উপায়গুলি নিয়ে তোমার নিরুৎসাহিত হওয়া, আশা হারানো কোনোমতেই উচিত নয়। আমার কাছে তোমার জন্মদিন সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাকে উৎফুল্ল করে। তোমার এই দিনে খুশি হওয়া উচিত। আমরা ছোট খাটো মানুষেরা ছোট খাটো উপায়ে ছোট খাটো মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করি। কেন এই বিশাল রাষ্ট্র আমাদের আশা, আমাদের ভালবাসা, আমাদের স্বপ্নকে এত ভয় করে? আমরা কি কারও সাথে অন্যায় করেছি? আমরা কি কারও ক্ষতি করেছিলাম? আমাদের জীবন কেন লঙ্ঘন হয়? স্বপ্ন কেন অপরাধী হয়? আশা কেন পিষ্ট হয়?  আমরা কি আমাদের নিজস্ব পৃথিবীতে, আমাদের নিজের স্বপ্নের ছোট্ট জগতে, নৃশংস ও অমানবিক হিংস্র আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারিনা? এই মুহুর্তে তোমাকে আর আমাকে কী এত শক্তি জোগায়? এই বছর জন্মদিনে আমি তোমাকে কী দিতে পারি? আমার সাথে কী আর বাকি আছে? একইরকম ভালোবাসা। সেই একই রকম ভালোবাসা যা স্কুলজীবনে প্রথম দেখা হওয়ার পরে আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আমি তোমাকে জীবনে যা কিছু দিয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশী তুমি ভালোবাসা দিয়েছ। আমাদের কৈশর প্রেমের দিনগুলি থেকে আমরা এখনও সেই স্বপ্নগুলো ভাগ করে নিতে পারি।

আমার মুক্তির জন্য তুমি এখন একা যোদ্ধা। এই অন্ধকার দিনগুলোতে হতাশ হয়েও না। আমাদের আশা, স্বপ্নগুলো হারানো উচিৎ নয় এই অন্ধকার সময়, এটা আলোর উৎসকে স্থায়ী ভাবে ঢেকে রাখতে পারবেনা। এগুলো ফাঁকা শব্দ নয়। এগুলো অলঙ্কৃত কথা নয়। ইতিহাস বহুবার প্রমাণ করেছে যে আমাদের স্বপ্নগুলো ফাঁপা নয়। আমাদের আশা আদর্শবাদী অর্থহীন নয়। আমরা জিতব। 

কারাগারের পিছনে থেকে এই বছর তোমার জন্মদিনে, আমি নিজেকে তোমার ভালবাসায়ে সমর্পন করলাম। আমি আমার সাহস আমার আশা আমার স্বপ্নগুলোকে বজায় রাখতে পেরেছি তোমার ভালোবাসার কারণে। আমার জীবনে এখনও পর্যন্ত যা কিছু করেছি তা করতে পেরেছি কারণ তুমি আমার পাশে বাতিঘরের মত দাঁড়িয়ে ছিলে যা থেকে বর্ষিত হয়েছে ভালোবাসা। 

ইতি, ভালবাসার সহিত, 

সাই।

Post a Comment

0 Comments