দীর্ঘদিন ধরে উত্তর চব্বিশ পরগনার চাঁদপাড়া অঞ্চলে অবৈধ ভাবে নদী, পুকুর, খাল ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন সেখানকার স্থানীয় মানুষ। যে আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন একদা বরুণ বিশ্বাস। যে আন্দোলনের কারণে রাজরোষে পরে তাঁকে প্রাণ দিতে হয়। সেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁরই সহযোদ্ধা নন্দ দুলাল দাস। সম্প্রতি তাঁর উপর আক্রমনের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, চাঁদপাড়া স্টেশন থেকে রাতে হেঁটে সোনাটিকারি এলাকায় বাড়ি ফেরার সময় ফাঁকা রাস্তায় পিছন থেকে দুজন দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে গুলি চালিয়ে পালায়। লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে বাঁচেন তিনি। নন্দ দুলাল দাসের দাবি যেখানে এই ঘটনা ঘটে সেখানে গুলির দাগ রয়েছে। অন্যদিকে প্রশাসনের বক্তব্য গুলি নয়, ছিল বাজি। প্রশ্ন উঠছে, যদি প্রশাসনের কথাই ঠিক হয় তাহলে এই ঘটনায় যারা যুক্ত তাঁদের কেন শনাক্ত করছেনা পুলিশ। কিসের ভিত্তিতেই বা প্রশাসনের এই মনে হওয়া, যেখানে ভিক্টিম নিজে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছেন সেখানে প্রশাসনের দায়িত্ব স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা, সঠিক কারণ খুঁজে বের করা। প্রশ্ন উঠছে, ঘটনার দিন রাতে হোয়াটস আপে স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও তদন্ত কতটুকু এগিয়েছে, যে ৭ জন সন্দেহভাজনের নাম তিনি পাঠিয়েছেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদটুকুও কেন করা হয়নি।
নন্দ দুলাল দাস এপিডিআর চাঁদপাড়া শাখার সভাপতি ও এলাকায় অধিকার আন্দোলনের একজন দক্ষ সংগঠক। তিনি এর আগেও বহুবার প্রমোটাররাজের বিরুদ্ধে, নদী খাল পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। তাঁর দাবি, সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী তিনি, প্রয়াত বরুণ বিশ্বাসের সহযোদ্ধা। এর আগেও তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা হয়েছে। বরুণ বিশ্বাস যেখানে পথসভা করতেন সেই চাঁদপাড়া বাসস্ট্যান্ডে আজ ৬ নভেম্বর এলাকায় অবৈধ ভাবে খেলার মাঠ দখল, নদী পুকুর খাল ভরাট ও স্থানীয় দুর্নীতি, দুষ্কৃতীরাজের বিরুদ্ধে এপিডিআর চাঁদপাড়া শাখার উদ্যোগে এক পথসভা আয়োজিত হয়। পথসভায় উপস্থিত ছিলেন শহীদ বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা বিশ্বাস। তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম, নারী ধর্ষণ, নদী খাল পুকুর ভরাট, চূড়ান্ত প্রশাসনিক দুর্নীতি, মাফিয়া রাজের কথা তুলে ধরেন। তুলে ধরেন এলাকার মানুষদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলে কিভাবে প্রাণ দিতে হয় তাঁর ভাই বরুণ বিশ্বাসকে।
বক্তব্য রাখছেন প্রয়াত বরুণ বিশ্বাসের দিদি, প্রমীলা বিশ্বাস
এদিনের পথসভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন এপিডিআর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শুর। তিনি এই আক্রমণকে অধিকার আন্দোলনের সমস্ত কর্মীদের উপর আক্রমন হিসেবে অভিহিত করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি করেন। প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, তাঁরা সাংগঠনিক ভাবে তাঁদের সংগঠনের কর্মী নন্দ দুলাল দাসের পাশে আছেন। এদিন সভায় উপস্থিত ছিলেন এপিডিআর চাঁদপাড়া, মছলন্দপুর শাখার সদস্যরা ছাড়াও অন্যান্য শাখা সদস্য ও স্থানীয় মানুষ। বক্তব্য রাখেন সোমনাথ বসু, নিশা বিশ্বাস, শংকর দাস, মিঠুন মন্ডল, যশোর রোড গাছ আন্দোলনের কর্মী অরিন্দম দে সহ আরও অনেকে।
0 Comments