আমার বন্ধুর ঘর কোথায়?
ভাঙা দেওয়ালের ফাঁকে
উঁকি দেয় লতানো কিশলয়,
কাছে গিয়ে
প্রশ্ন করলাম তাকে;
প্রশ্ন করলাম,
রঙিন ঘাসফুলের দলকে,
যারা উঠোনে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
সদ্য পৃথিবীর আলো দেখা বাছুরের
অপেক্ষমান চোখে
তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম
আমার বন্ধুর ঘর।
কোথায়?
আমার বন্ধুর ঘর?
হাঁটতে হাঁটতে
পথে কিছু লালরঙা ফুল কুড়িয়ে
পকেটে রাখলাম।
জানালার পাল্লা বেয়ে নেমে আসা
বিন্দু বিন্দু কুয়াশায় তখন
খুঁজছিলাম সেই পুরোনো স্পর্শ।
তার ভালোবাসার চিঠিখানা
আমার হাতে রয়ে গেছে,
আজও।
পাখিদের নামে লেখা সে চিঠি
ইস্কুল ছুটির তাড়াহুড়োয়
বইয়ের ভেতর লুকিয়ে রেখেছিলাম।
আমার বন্ধুর ঠিকানা দাও কেউ
বলো কী করে যাবো তার কাছে?
পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছি কত
খুঁজে ফিরেছি তাকে
আমলাপুরের ছোটো কুঁড়েঘরগুলোয়
শুঁটকির পচা গন্ধের মধ্যে
আমার হাতের চিঠিখানা
আলতো করে তুলে দিতে চেয়েছি
তার হাতে;
অন্ধকারে আহত বুড়ো কুকুরের মতো
অপেক্ষা করেছি
ভাঙা দেওয়ালের গা ঘেঁষে,
বন্ধুর দুধের সরের মতো মুখখানা
একবার দেখবো বলে।
বন্ধুর বাড়ির পাশে পড়ে থাকা
ভাঙা ইঁটের টুকরোয়
চুমু খেলাম,
নিঃশব্দে।
দেওয়ালের বাদামি টিকটিকিটা
এদিকে চেয়ে হাসে;
ফিসফিস করে বললাম তাকে -
আমার বন্ধুর খোঁজ দিতে পারো?
খসে পড়া পলেস্তারাগুলোকেও
বললাম,
বন্ধুর হদিশ জানো?
দয়া করে বলো
তিনচাকার যে গাড়িটা
আমার বন্ধুর শরীর আর স্বপ্ন
একসাথে তুলে নিয়ে গেছিল
তাকেও জিজ্ঞেস করলাম,
কোথায় আমার বন্ধু?
দেওয়ালের সাথে আমার কথা ফুরিয়েছে।
পকেট থেকে চিঠিখানা বের করে
তার দুয়ারে রেখে দিলাম;
ফেরার জন্য এগোতে যাব
দেখি এক কয়েদ পাখি,
হাত টেনে বলল :
"তোমার বন্ধু বেঁচে আছে।
রাষ্ট্রের তৈরি গরাদের ভেতর থেকে
সে মানুষকে অভিবাদন জানাচ্ছে।"
মানুষ আমার বন্ধুকে মনে রাখবে
মানুষ মনে রাখবে তাকে
তাদের খাবারের প্রতিটি কণায়।
0 Comments