শতবর্ষে রক্তকরবী—ফিরে দেখা

প্রীতিলতা বিশ্বাস

বহু আলোচিত রক্তকরবী নাটকটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে। যদিও নাটকটির রচনাকাল ১৯২৩ সাল। ঐ বছরের মে থেকে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্য রবীন্দ্রনাথ নাটকটি মোট দশবার লেখেন। প্রতিবারই তিনি নতুনকিছু সংযোজন এবং পরিবর্তন করেছেন। নাটকটির নামও রবীন্দ্রনাথ তিনবার পরিবর্তন করেন। প্রথমে এর নাম ছিল যক্ষপুরী, পরে হয় নন্দিনী, সব শেষে রক্তকরবী। রক্তকরবী হিসাবেই প্রবাসী পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। সেই হিসাবে বর্তমানে আমরা আছি রক্তকরবী রচনাকালের শতবর্ষে। রক্তকরবী নাটকের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের সমাজ সচেতনতা, প্রকৃতি ভাবনা, ভবিষ্যত সমাজের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে তাঁর দূরদৃষ্টি। আর তাই রক্তকরবী নাটক সেদিন যেমন প্রাসঙ্গিক ছিল আজও তেমনই প্রাসঙ্গিক। এই প্রাসঙ্গিকতাকেই বুঝে নেবার চেষ্টা করব বর্তমান আলোচনায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়-ক্ষতি পূরণের চেষ্টায় ইউরোপ, রাশিয়ায় গঠিত হয়েছে নতুন সমাজ, এদিকে ঔপনিবেশিক ভারতে চলছে স্বাধীনতা সংগ্রাম—এই রকম একটি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ রচনা করলেন তাঁর রক্তকরবী নাটকটি। বাস্তব অবস্থাকে ভিত্তি করে তৈরি হল একটি রূপকধর্মী নাটক। নাটকটি প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নিজের বক্তব্য—‘কর্ষণ-জীবি আর আকর্ষণ-জীবি এই দুই জাতীয় সভ্যতার মধ্যে এক বিষম দ্বন্দ্ব আছে, এ সম্বন্ধে বন্ধুমহলে আমি প্রায়ই আলাপ করে থাকি। কৃষিকাজ থেকে হরণের কাজে মানুষকে টেনে নিয়ে কলিযুগ কৃষিপল্লীকে কেবলি উজাড় করে দিচ্ছে। তা ছাড়া শোষণ-জীবি সভ্যতার ক্ষুদাতৃষ্ণা দ্বেষহিংসা বিলাসবিভ্রম সুশিক্ষিত রাক্ষসেরই মতো।’ বস্তুত ইউরোপের শিল্প-বিপ্লব মানুষের সমাজ জীবনকে সামগ্রিকতায় উন্নিত করার বদলে জন্ম দিয়েছিল শ্রমিক শোষনের, ঔপনিবেশিক শোষণের, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের। সভ্যতার এই দ্বন্দ্বকে রবীন্দ্রনাথ চিরকালের বলে রামায়ণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। রামায়ণের যুগ ছিল কৃষি সম্প্রসারণের যুগ। কৃষি সম্প্রসারণের যুগেও মানুষ প্রকৃতিকে নষ্ট করেছে ব্যাপক আকারে, পীড়ন করেছে অপর মানুষকে। কবির বক্তব্য অনুসারে কৃষি সম্প্রসারণের সেই দানবীয় লোভটিকেই বাল্মীকি গা-ঢাকা দিয়ে বলবার চেষ্টা করেছেন সোনার মায়ামৃগ বৃত্তান্তের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু যন্ত্রসভ্যতার প্রকৃতি লুণ্ঠন যে একদিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে তা রবীন্দ্রনাথ আন্দাজ করেছিলেন আজ থেকে একশ বছর আগেই। আজ আমরা প্রতি পদে যে সঙ্কটকে প্রত্যক্ষ করছি। সভ্যতার এই যাত্রাপথে মানুষের অর্জিত জ্ঞান চিরকালই হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এক শ্রেণীর মানুষের লোভ চরিতার্থ করার কাজে। নিঃস্ব হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ, রিক্ত হয়েছে প্রকৃতি। উন্নয়নের উল্টোরথের সারথি হয়েছে নিত্য নতুন প্রযুক্তি। মানুষের নিঃস্ব হওয়ায় সান্ত্বনার মলম লাগিয়েছে ধর্ম। এ এক এমন জাল যা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসাটা সহজ নয় মোটেই।      

যক্ষপুরীর সোনার খনিতে বিভিন্ন গা-গঞ্জ থেকে কাজ করতে আসে খোদাইকররা। মাটির তলা থেকে তোলা ‘মরা ধন’ সোনার মালিক মকর রাজা। রাজা তার সম্পদের সঙ্গে নিজেও একটি ঘরে আবদ্ধ থাকেন। একটি মাত্র জালের জানলা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে তিনি লোকের সঙ্গে কথা বলেন। খনি শ্রমিকদের পরিচালনা করে সর্দাররা আর তাদের সাহায্য করে মোড়লরা। ‘মরা ধনের শব-সাধনায়’ নিযুক্ত অধ্যাপক নিজেকেও জালে বন্দী বলেই মনে করেন, কারণ তার মধ্যে ‘মানুষের অনেকখানি বাদ গিয়ে পন্ডিতটুকু জেগে আছে’। ‘এ ছাড়া একজন গোঁসাইজি আছেন, যিনি নাম গ্রহণ করেন ভগবানের কিন্তু অন্ন গ্রহণ করেন সর্দারের। তাঁর দ্বারা যক্ষপুরীর অনেক উপকার ঘটে।’ এ হেন যক্ষপুরীতে নন্দিনীকে ধরে আনা হয়েছে। কিন্ত তার ভালোবাসার মানুষ রঞ্জনকে আনা হয়নি। রঞ্জনকে কেন আনা হয়নি জানতে চাইলে অধ্যাপক নন্দিনীকে বলেন—'সব জিনিসকে ভেঙে টুকরো করে আনাই এদের পদ্ধতি।’ আসলে যা খণ্ডিত তা সহজে দমনীয়। সামাজিক বিভাজনে তাই শাসনের সুবিধে।

এই নাটকের তিনটি চরিত্র রূপক—নন্দিনী, মকররাজা এবং রঞ্জন। নন্দিনী এখানে জীবনের প্রতীক স্বরূপ এমন এক মানবী যে পাথরের ফাটল দিয়ে ঢোকা আলোর রশ্মি মতো। সে মাটির উপরে যেখানে রূপ, রসে জীবন সৃষ্টি হয়ে সহজ সরল ছন্দে বয়ে চলে, সেখানকার মানুষ। নাটকে তার কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কথা থাকে না। সে তার ভালোবাসা রঞ্জনকেও পেতে চায় যক্ষপুরীর মানুষদের মুক্তির জন্য। পাথরের চাপের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা ঝর্না, হাওয়ায় দোল খাওয়া ধানের শীষের মধ্যে যে স্বাভাবিক প্রাণের ছোঁয়া থাকে নন্দিনী তারই প্রতীক স্বরূপ। খনিকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা যক্ষপুরীর বিশুপাগল, অধ্যাপক, কিশোর সকলেই নন্দিনীকে ভালোবেসে তার প্রাণের ছোঁয়াটুকু পেতে চায়। আসলে তারা প্রত্যেকেই বদ্ধ জীবনের বাইরে মুক্ত প্রকৃতিতে ফিরে যেতে চায়, কিন্তু পারে না। 

যক্ষপুরীতে নন্দিনীকে নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু সে বন্দিনী নয়। বিপরীতে রাজা নিজেকে বন্দী করে রেখেছে একটি ঘরে। মাটির নিচের মৃত সম্পদ তুলে এনে সঞ্চয় করাটা তার নেশা। কিন্তু মাটির উপরের জীবনকে সে জানতে চায়। নন্দিনীর ভালোবাসা পেতে চায় রাজা। নন্দিনী আর রঞ্জনের ভালোবাসার স্বরূপটি বুঝতে চেষ্টা করে। কখনও রাজা রঞ্জনকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। নন্দিনীর কাছে জানতে চায় তাকে নন্দিনীর কেমন লাগে। নন্দিনীর কাছে রাজা এক আশ্চর্য শক্তি ঠিক যেমন ঝড়ের আগের প্রকাণ্ড মেঘ। লক্ষণীয় বিষয়, এই মেঘ যখন বারী ধারায় বিলীন হয় তখন পৃথিবী হয়ে ওঠে সবুজ।  
  এই নাটকে রঞ্জনের কোনো বাস্তব উপস্থিতি নেই। তার উপস্থিতি অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সে মানুষের মুক্তির প্রতীক। রঞ্জন রক্তকরবী ফুল ভালোবাসে। রঞ্জনকে  ভালোবেসেই তাই নন্দিনী নিজেকে রক্তকরবী দিয়ে সাজিয়ে তোলে। নন্দিনী রঞ্জনকে শঙ্খিনীনদীর সঙ্গে তুলনা করে, যা হাসতেও পারে আবার ভাঙতেও পারে। প্রকৃতিতে নদ-নদীর গতিপথ অনাদি কালের, সেই রকম মানুষের ভিতরে মুক্তির আকাঙ্খাও চিকালের।
 
নাটকের একটি দৃশ্যে নন্দিনী রাজার কাছে আসে, মাঠে ফসল পেকেছে, দূরে ফসল কাটার পৌষের গান গাইছে কৃষক। রাজা ব্যক্তি হিসাবে নন্দিনীকে ভালোবাসে, এবং রঞ্জনের সঙ্গে নিজের তফাৎ বোঝে। জালের জানলা দিয়ে এক হাত বার করে সে নন্দিনীকে স্পর্শ করতে চায়। নিজেকে এক শ্রান্ত পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করে। কিন্তু দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে পারে না। তার হাতের উপর বসে থাকে এক শিকারি বাজ পাখি, যা তার শক্তির প্রতীক। শ্রেণী হিসাবে সে সর্দারদের স্বার্থ রক্ষা করে। যক্ষের ধনকে সঞ্চয় করে রাখে। নন্দিনী রাজাকে তার বদ্ধ ঘর থেকে বের করে মাঠে নিয়ে যেতে চায়। রাজাকে সে জালের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতে বলে। নন্দিনী বলে, ‘পৌষের রোদ্দুর পাকা ধানের লাবণ্য আকাশে মেলে দিচ্ছে। তুমি বেরিয়ে এসো রাজা তোমাকে মাঠে নিয়ে যাই।’ রাজা বিস্মিত হয় নন্দিনীর কথায়। জিজ্ঞেস করে, ‘আমি মাঠে যাব? কোন্ কাজে লাগব?’ নন্দিনী জোরের সাথে বলে, ‘মাঠের কাজ তোমার যক্ষপুরীর কাজের চেয়ে অনেক সহজ।’ রাজা বলেন, ‘সহজ কাজটাই আমার কাছে শক্ত। সরোবর কি ফেনার-নূপুর-পরা ঝরনার মতো নাচতে পারে। যাও যাও, আর কথা কয়ো না, সময় নেই।’ নন্দিনী রাজার কথায় চলে যায় না। সে বলে, ‘অদ্ভুত তোমার শক্তি। যেদিন আমাকে তোমার ভাল্ডারে ঢুকতে দিয়েছিলে, তোমার সোনার তাল দেখে কিছু আশ্চর্য হই নি, কিন্তু বিপুল শক্তি দিয়ে অনায়াসে সেইগুলি নিয়ে চুড়ো করে সাজাচ্ছিলে, তাই দেখে মুগ্ধ হয়েছিলুম। তবু বলি সোনার পিণ্ড কি তোমার ঐ হাতের আশ্চর্য ছন্দে সাড়া দেয়, যেমন সাড়া দিতে পারে ধানের ক্ষেত। আচ্ছা রাজা, বলো তো, পৃথিবীর এই মরা ধন দিনরাত নাড়াচাড়া করতে তোমার ভয় হয় না?’ রাজা জানতে চায়, ‘কেন, ভয় কিসের।’ নন্দিনী উত্তর দেয়, ‘পৃথিবী আপনার প্রাণের জিনিস আপনি খুশি হয়ে দেয়। কিন্তু যখন তার বুক চিরে মরা হাড়গুলোকে ঐশ্বর্য বলে ছিনিয়ে নিয়ে আস তখন অন্ধকার থেকে একটা কানা রাক্ষসের অভিসম্পাত নিয়ে আস।’ রাজা খুব অবাক হয়। প্রশ্ন করে, ‘অভিসম্পাত?’ নন্দিনী উত্তর দেয়, ‘হ্যাঁ, খুনোখুনি কাড়াকাড়ির অভিসম্পাত।’ এই অভিসম্পাতকে রবীন্দ্রনাথ তার দূরদৃষ্টি দিয়ে অনুভব করেছিলেন। আজকের প্রজন্ম জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছে।

এই নাটকে অধ্যাপক অনুশোচনায়দগ্ধ মন নিয়ে নন্দিনীর কাছে জানতে চায়, ‘নন্দিনী, একটা কথা তোমাকে জিজ্ঞেস করি যক্ষপুরীকে তোমার ভয় করছে না?’ নন্দিনী জানতে চায় ভয় কেন করবে। অধ্যাপক উত্তর দেয়, ‘গ্রহণের সূর্যকে জন্তুরা ভয় করে, পূর্ণ সূর্যকে ভয় করে না। যক্ষপুরী গ্রহণলাগা পুরী। সোনার গর্তের রাহুতে ওকে খাবলে খেয়েছে। ও নিজে আস্ত নয়, কাউকে আস্ত রাখতে চায় না।’ যক্ষপুরী থেকে নন্দিনীকে পালিয়ে যাবার পরামর্শ দেয় অধ্যাপক। বলে, ‘যেখানকার লোক দস্যুবৃত্তি করে মা বসুন্ধরার আঁচলকে টুকরো টুকরো করে ছেঁড়ে না, সেইখানে রঞ্জনকে নিয়ে সুখে থাকোগে।’ রবীন্দ্রনাথ যক্ষের ধন আহরণকে দস্যুবৃত্তির সাথেই তুলনা করেছেন। ধনীদের এই দস্যুবৃত্তির ফল টের পাচ্ছে বর্তমান পৃথিবী। জলবায়ুর পরিবর্তন অনুভূত হচ্ছে সারা বিশ্ব জুড়েই। কপালে ভাজ পড়েছে রাষ্ট্রনায়কদের। সারা বিশ্বজুড়ে তাই ব্যাপক হৈ চৈ চলছে পরিবেশ রক্ষার জন্য, যদিও তাতে কাজের কাজ কী হচ্ছে বলা মুস্কিল।

যক্ষপুরীর রাজা এবং অধ্যাপক দুজনেই অন্তরদ্বন্দ্বে জীর্ণ। দুজনেই যক্ষের ধন আহরণের খারাপ পরিণতি জেনেও তার ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। এই না পারার যন্ত্রনা তাদের কথাতে বেজে ওঠে। সেখানেই রবীন্দ্রনাথ পাঠক বা দর্শককে ভাবিয়ে তোলেন গোটা ব্যবস্থাটা নিয়েই, যা রাজনীতি-সমাজনীতি-অর্থনীতিকে এক সূত্র গেঁথে রেখেছে। রবীন্দ্রনাথ পরিবেশ বিনাশকে সমাজ বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় হিসাবে দেখেননি। পুঁজিবাদের রাহুগ্রাসের অংশ হিসেবেই দেখেছেন। ব্যাপারটা শুধু দু-একজনের চাওয়া বা না-চাওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়। বিরাট চক্র এর সাথে জড়িত, যা মানব সভ্যতার ইতিহাসের প্রেক্ষিতে বিচার্য। সাধারণ মানুষ, শাসক শ্রেণী এবং প্রশাসন সবাই যেন জালের মধ্যে আটকে আছে। জালের মধ্যে যে আটকে আছে তার প্রমাণ গত বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন। বড় বড় রাষ্ট্রগুলো সেখানে পরিবেশ বিনাশের ভয়াবহ পরিণতির কথা জেনেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সব জেনেশুনেও তারা সরে আসতে পারছে না পরিবেশকে ধ্বংস করার পথ থেকে। কারণ সকলেই তারা নিজেদের মুনাফা এবং ভোগবিলাসীতাকেই অতিরিক্ত প্রাধান্য দিচ্ছে। নিজেদের তৈরি মুনাফার জালে নিজেরাই আটকা পড়েছে। রক্তকরবী নাটকের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বুঝিয়ে দিয়েছেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় রাষ্ট্র এবং রাজার কাজ আসলে কিছু লোকের সুখ-সুবিধার জন্য সম্পদ বাড়িয়ে তোলা। সব মানুষের কল্যাণ তাতে হচ্ছে কি না সে প্রশ্ন সেখানে অবান্তর। সম্পদ বাড়াবার জন্য পৃথিবীকে ধ্বংস করতে হলেও তাদের আপত্তি নেই। বর্তমানের সুখ আর ক্ষমতা প্রদর্শন নিয়ে তারা ব্যস্ত, ভবিষ্যতের সুন্দর পৃথিবী তাদের কাম্য নয়। রক্তকরবী নাটকে রাজা হচ্ছে সম্পদ আর ক্ষমতার প্রতীক; নন্দিনী তার বিপরীতে সৌন্দর্য আর প্রকৃতির প্রাণ প্রাযুর্যের প্রতীক। 

তিনটি চরিত্রের প্রতীকি উপস্থিতি ছাড়াও ‘রক্তকরবী’ নাটকটির মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী চরিত্রকে খুঁজে পাওয়া যায়। শ্রেণী দ্বন্দ্বকেও পরিষ্ফুট হতে দেখি। ফাগুলাল, বিশুপাগল, কিশোর, গোকুল—এরা সকলেই খোদাইকর। এদের শ্রমেই মাটির তলা থেকে সোনা উঠে রাজার ঘরে সঞ্চিত হয়। কিশোর নন্দিনীকে পাগলের মতো ভালোবাসে। সর্দারদের মার খেয়েও সে রোজ নন্দিনীকে রক্তকরবী ফুল এনে দেয়। প্রয়োজনে নন্দিনীর জন্য সে প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারে। কিন্তু গোকুল চায় না, নন্দিনী এই যক্ষপুরীতে থাকুক। দাসত্বের শৃঙ্খল পরে সে টিকে থাকতে চায়। তবু আজানা, অচেনা পরিবর্তনকে সে ভয় পায়। লেখাপড়া জানা বিশুকে সর্দাররা খনি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চর হিসাবে নিয়োগ করেছিল। কিন্তু বিশুর বিবেক তা মানতে পারেনি। আরামের কাজ ছেড়ে সে এখন শ্রমিকদেরই একজন। বিবেকটুকু বাঁচিয়ে রাখে তার গানে। বিশুর বৌ তার এই বিবেকের সঙ্গী হতে পারে না; বিশুকে ছেড়ে চলে যায়। বিশুর নামের সঙ্গে ‘পাগল’ শব্দটা খানিক ভালোবেসেই জুড়ে দেয় সকলে। নন্দিনীর সঙ্গে তার মনের সুরটি মিলে যায়। গানে গানে তারা মুক্ত আকাশে বিচরণ করে। ফাগুলাল সংসারী মানুষ। তার স্ত্রী চন্দ্রা নন্দিনীকে পছন্দ করে না। নন্দিনীর প্রাণের জোয়ারকে সে ভয় পায়। গোকুলের মতো সেও এক অনাগত পরিবর্তনের আশঙ্কায় ভোগে। চন্দ্রা আবার নিজেদের গ্রামের ফিরে যাবার কথা বললে, ফাগু বলে—‘ঘরের রাস্তা বন্ধ, জান না বুঝি?’ এর উত্তরে চন্দ্রা বলে—‘আমরা কি ওদের দরকারের গায়ে আঁট করে লাগানো, যেন ধানের গায়ে তুঁষ? ফালতো কিছুই নেই?’ মানুষের শ্রম ভিন্ন মুনাফা হয় না, পুঁজির বৃদ্ধি ঘটে না। আবার শ্রমিকও শোষিত হলেও উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে বাঁচতে পারবে না। শ্রম ও পুঁজির মধ্যে তাই ধান আর তুঁষের মতোই সম্পর্ক। এই নির্মম সত্যটি আরও পরিষ্ফুট হয় যখন চন্দ্রার কথার উত্তরে ফাগুলাল বলে—‘আমাদের বিশুপাগল বলে, আস্ত হয়ে থাকাটা কেবল পাঠার নিজের পক্ষেই দরকার; যারা তাকে খায়, তার হাড়গোড়, খুরলেজ বাদ দিয়েই খায়।’
  মোড়লরা এই ব্যবস্থায় মধ্যবিত্ত শ্রেণী। সরদারকে তুষ্ট করে নিজেদের সুবিধাটুকু হাসিল করে নেওয়াটাই তাদের আসল কাজ। শ্রমিকদের পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা মমতাহীন। তাই যক্ষপুরীর কলঙ্কের দায়ভারটা তারাই বহন করে। আর আছে এক গোঁসাই, যে ধর্মের মোড়কে সর্দারি করে। ভণ্ডামি দিয়ে শোষণকে ন্যায়সংগত করে তোলাই তার কাজ। সম্ভবতঃ রক্তকরবীতে রবীন্দ্রনাথই প্রথম ধর্মের মুখোশকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। আবার এই নাটকে রবীন্দ্রনাথ যতটা রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন প্রকৃতি সংরক্ষণের পক্ষেও ততটাই সওয়াল করেছেন। 

নাটকে আমরা দেখতে পাই ক্রমশ রাজার মানসিক পরিবর্তন হচ্ছে। রাজার মানসিক পরিবর্তনে নন্দিনীর যেমন ভূমিকা আছে, রাজার নিজেরও তেমন চেষ্টা আছে। রাজা এবং নন্দিনীর কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয় তার এই চেষ্টা। শোষক শ্রেণীর প্রতিনিধি, রাজার মানসিক পরিবর্তন ব্যক্তি হিসাবে তার অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল। নিজের শ্রেণীগত অবস্থান থেকে মুক্ত হবার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির ভিতরে এই অন্তর্দ্বন্দ্ব আবশ্যিক ভূমিকা পালন করে। খোদাইকর গোকুল এই অন্তর্দ্বন্দ্বকেই ভয় পায়; অথচ কিশোরের শ্রেণী চেতনা তার ভিতরে সমষ্টিগত মুক্তির আকাঙ্খা জাগিয়ে তোলে। রাজা তার শ্রেণীগত অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসলে সর্দাররাই তার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরে। সর্দাররা তখন নিজেদের শ্রেণী স্বার্থকে বজায় রাখার জন্য রাজাকে বাদ দিয়েই ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। এই ব্যবস্থাকে সমূলে বিনাশ করার জন্য তখন প্রয়োজন হয় কারিগর, খোদাইকরদের যৌথ প্রচেষ্টা। নন্দিনী, রঞ্জনের আত্মবলীদান যার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

রক্তকরবী নাটকে আমরা তিন রকম অস্তিত্বের কথা দেখতে পাই। রাজা নন্দিনীকে বলছেন—‘এই ব্যাঙ একদিন একটি পাথরের কোটরের মধ্যে ঢুকেছিল। তারই আড়ালে তিন হাজার বছর ছিল টিকে। এইভাবে কী করে টিকে থাকতে হয় তারই রহস্য ওর কাছ থেকে শিখছিলুম; কী করে বেঁচে থাকতে হয় তা ও জানে না। আজ আর ভালো লাগল না। পাথরের আড়াল ভেঙে ফেললুম, নিরন্তর টিকে থাকার থেকে ওকে দিলুম মুক্তি।’ অর্থাৎ টিকে থাকা প্রাণীর একধরনের অস্তিত্ব আবার বেঁচে থাকা প্রাণীর আরেক ধরনের অস্তিত্ব। শ্রমিকদের মজুরি হিসাবে ততটুকুই দেওয়া হয় যাতে তারা টিকে থাকতে পারে। আর তার উৎপাদনের উদ্বৃত্ত যারা ভোগ করে তারা ব্যক্তি জীবনে বাঁচে। এই অস্তিত্বের অপর এক প্রকার দেখতে পাই যখন ফাগুলাল রঞ্জনকে নিঃশব্দ পরে থাকতে দেখে আক্ষেপ করে এবং নন্দিনী তাকে বলে—‘নিঃশব্দ নয়। মৃত্যুর মধ্যে তার অপরাজিত কন্ঠস্বর আমি এই যে শুনতে পাচ্ছি। রঞ্জন বেঁচে উঠবে—ও কখনো মরতে পারে না।’ অর্থাৎ মৃত্যুর পরেও সমাজ জীবনে একজনের অস্তিত্ব থেকে যায় যখন সে নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের মুক্তির জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পারে। সবকিছুর ঊর্ধে আর এক ধরনের অস্তিত্ব হয়। সেই অস্তিত্বে প্রাণীরা প্রকৃতিতে প্রজাতি হিসাবে টিকে থাকে। আজকে মানুষের এই অস্তিত্ব প্রায় প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে গেছে।    

যক্ষপুরীর জঞ্জালের পিছনে হওয়া একটিমাত্র রক্তকরবী গাছ থেকে কিশোর, সব রকমের ঝুঁকি নিয়ে নন্দিনীকে ভালোবেসে ফুল এনে দেয়। রুক্ষ পরিবেশে বেঁচে থাকা গাছ অদম্য ইচ্ছা শক্তির প্রতীক, সেই সঙ্গে তার ফুলের শোণিত বরণ জীবনের জন্য ভীষণ অর্থবহ হয়ে ওঠে। নাটকে রক্তকরবী ফুল আর প্রেম গাঁথা হয়ে যায় একসূত্রে। রঞ্জনকে ভালোবেসে নন্দিনী তার অঙ্গ সাজায় রক্তকরবী ফুলে। সে কথা জানে কিশোর। নন্দিনীকে ভালোবেসে কিশোর তাকে সেই ফুল এনে দেয়। বিশু, নন্দিনী ও রঞ্জনের পূর্ব পরিচিত। বিশু নন্দিনীকে ভালোবেসেই গান শোনায়। একদিন বিশুর গান শুনে নন্দিনী বলে—‘পাগল, যখন তুমি গান কর তখন কেবল আমার মনে হয়, অনেক তোমার পাওনা ছিল কিন্তু কিছু তোমাকে দিতে পারি নি।’ এর উত্তরে বিশু বলে—‘তোর সেই কিছু-না-দেওয়া আমি ললাটে পরে চলে যাব। অল্প-কিছু-দেওয়ার দামে আমার গান বিক্রি করব না।’ 

নাটকের শেষ পর্যায়ে যক্ষপুরীতে রঞ্জন এসেছে এবং তার কাছে রক্তকরবীর মঞ্জরী দিয়ে নন্দিনীর খবর পৌঁছে দেবার ভার নেয় কিশোর। বিশু নন্দিনীকে বলে—‘এইবার রঞ্জনের সঙ্গে তোমার মিলন হোক।’ উত্তরে নন্দিনী বলে—‘মিলনে আমার সুখ হবে না। এ কথা কোনোদিন ভুলতে পারব না যে, তোমাকে শূন্যহাতে বিদায় দিয়েছি। আর ঐ যে বালক কিশোর, ও আমার কাছ থেকে কী বা পেলে।’ রঞ্জনের মৃতদেহের কাছে রক্তকরবীর মঞ্জরী পড়ে থাকতে দেখে নন্দিনী বোঝে কিশোর তার খবর রঞ্জনের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল ঠিক মতোই। কিন্তু কিশোরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। লড়াই-এর শেষ যাত্রায় নন্দিনী এগিয়ে যায়। তার হাত থেকে খুলে পড়ে যায় রক্তকরবীর কঙ্কণ। ওদিকে কারিগররা গারদ ভেঙে বিশুকে মুক্ত করে। বিশু ফিরে এসে নন্দিনীর খোঁজ করতে গিয়ে পথের ধুলায় তার রক্তকরবীর কঙ্কণ পড়ে থাকতে দেখে। বিশু কঙ্কণ কুড়িয়ে নিতে নিতে বলে—‘তাকে বলেছিলুম, তার হাত থেকে কিছু নেব না। এই নিতে হল তার শেষ দান।’ বিশুর এই কথা দিয়েই শেষ হয় নাটক। শোনা যায় ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে…’ গানটি, যা যক্ষপুরীর পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করে। নন্দিনী, রঞ্জন, কিশোর এবং বিশু—এই চারজন প্রেমিক মানুষের প্রেম তাদের সমাজ ভাবনার ঐক্যমতে ব্যক্তিগত স্তর থেকে মানব প্রেমের স্তরে উন্নিত হয়, গাঁথা থাকে রক্তকরবীর বন্ধনে।
   
বর্তমান সমাজও সভ্যতার এক সঙ্কটকালের মধ্যে দিয়েই চলেছে, যার ইঙ্গিতও আমরা নাটকের মধ্যে থেকেই খুঁজে পাই। কৃষি ভিত্তিক সভ্যতায় মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে যে যোগ ছিল তার অনেকটাই ছিন্ন হয় শিল্প-সভ্যতার সমাজে। ফাগুলালের বৌ চন্দ্রা বিশুকে বলে যক্ষপুরীতে এসে পুরুষদের মধ্যে বদল হয়েছে কিন্তু মেয়েদের চরিত্রে কোনো বদল হয়নি। এ কথার প্রতিবাদ করে বিশু চন্দ্রাকে বলে—‘হয় নি তো কী, তোমাদের ফুল গেছে শুকিয়ে, এখন সোনা সোনা করে প্রাণটা খাবি খাচ্ছে।’ অর্থাৎ নন্দিনীর মতোই, একদিন ফুলের সাজই চন্দ্রার জন্য যথেষ্ট ছিল, কিন্তু যক্ষপুরিতে তার সোনার সাজ না হলে চলে না। আর তার এই চাহিদা পূরণ করার জন্যই, ফাগুলাল বারো ঘন্টার সঙ্গে আরও চার ঘন্টা যোগ করে খনিতে পরিশ্রম করে। যক্ষপুরী চন্দ্রাকে সোনার প্রতি প্রলুব্ধ করে তুলেছে। প্রয়োজন ব্যতিরেকে একটি সমাজ যখন কেবল পণ্য উৎপাদনের দিকে ঝোঁকে তখন পণ্যের বাজার তৈরীর জন্য মানুষকে প্রলুব্ধ করা, পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগী করে তোলার প্রয়োজন হয়। আজকের সমাজে যার চুড়ান্ত নিদর্শন আমরা দেখতে পাই। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিষয় গুরুত্বহীন হয়ে বিষয়ী প্রধান হয়ে ওঠে। মানুষ প্রলুব্ধ হয়ে বাজারমুখী হয়। এখন আবার Digital সভ্যতার যুগে মানুষ ঘরে বসেই delivery person -এর মাধ্যমে হাতে পায় তার পছন্দের জিনিসটি।

যক্ষপুরীতে শ্রমিকেরা সংখ্যা মাত্র। ফাগুলালকে, বিশু জিজ্ঞাসা করে—‘ফাগুভাই, তুমি কোন্ সংখ্যা?’ উত্তরে ফাগু বলে—‘পিঠের কাপড়ে দাগা আছে, আমি ৪৭ফ।’ আজকে যে শ্রমিকরা বাড়ি বাড়ি জিনিস পৌঁছে দেয় তাদের পিঠের কাপড়ে লেখা থাকে  Amazon, Zomato, Swiggy, Dunzo  ইত্যাদি। সেদিনও গা-গঞ্জ থেকে শ্রমিকরা ভিটে মাটি ছেড়ে এসে শিল্প শহরে জুটত। আজও পরিযায়ী শ্রমিকরা এক শহর থেকে আরেক শহরে ছুটে যায় ঠিকা শ্রমের ঠিকানায়। সেদিন ট-ঠ নামাঙ্কিত শ্রমিক বস্তিগুলোর দেখভালের দায়িত্ব নিতে হত সর্দারদের। আজ সে দায় তারা ঝেড়ে ফেলেছে। সেদিনই যার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বিশুর কথায়—‘…ওরা ঠিক করেছে এবার থেকে এখানে কারিগরের স্ত্রীরা আসতে পারবে না। সংখ্যারূপে ওদের হিসাবের খাতায় আমরা জায়গা পাই, কিন্তু সংখ্যার অঙ্কের সঙ্গে নারীর অঙ্ক গণিতশাস্ত্রের যোগে মেলে না।’ বর্তমানে অটোমেশনের দৌলতে বৃহৎ শিল্প কারখানার যুগ শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে উঠে গেছে শ্রমিকদের পরিসেবা দেবার বিভিন্ন পরিকাঠামো—বসবাসের জায়গা, স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি। যন্ত্র-শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা কমেছে, পরিসেবা শ্রমেই এখন তারা বেশি নিযুক্ত। শ্রমিকেরা দক্ষ এবং অদক্ষ—এই দুই ভাগ বিভক্ত, যদিও প্রায় সকলেই ঠিকা শ্রমিক। আইটির দক্ষ শ্রমিকের বাড়িতেই পরিসেবা পৌঁছে দিচ্ছে অদক্ষ শ্রমিকরা। আাউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে উৎপাদন ও পরিসেবা ব্যবস্থাকে ভেঙে টুকরো করে সস্তা শ্রমের বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সস্তা শ্রমে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হয় চড়া দামে বিশ্বের অন্যত্র। একটা কিনলে আর একটা free.  মানুষের প্রয়োজন থাকুক বা নাই থাকুক এ প্রলোভন ছেড়ে মানুষ বেরোতে পারে না। ঠিক যেমন বিশু, ফাগু, চন্দ্রারা যক্ষপুরীতে ভালো না থাকলেও গ্রামে ফিরে যাবার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলে। 

বাজার কেন্দ্রিক অর্থনীতিতে উপচে পড়া পণ্যে কাঁচামাল হিসাবে প্রকৃতির অংশ ঢুকে যাচ্ছে অল্প দামে। প্রকৃতি ধ্বংসের চরম মূল্য দিচ্ছে স্থানীয় মানুষ, আর জলবায়ু পরিবর্তনের দাম দিচ্ছে সমগ্র মানব সভ্যতা। আজকের বিশ্বায়নের এই সভ্যতা তরল সোনা মানে জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরশীল, যার ক্রমাগত দহন সৃষ্টি করেছে বিশ্ব উষ্ণায়নের। এই উষ্ণায়নের হাত ধরেই আমরা ঢুকে পড়েছি ষষ্ঠ গনবিলুপ্তির যুগে। প্রতিদিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একাধিক প্রজাতি। সভ্যতার সঙ্কট কাটিয়ে আগামী দিনে এই প্রকৃতিতে টিকে থাকা  মানুষের কাছে এক প্রতিস্পর্ধা! লোভ, হিংসা পারস্পরিক প্রতিযোগিতার এক শ্বাসরোধকারী জালের ভিতর আটকে আছে গোটা সভ্যতা। রক্তকরবী নাটকে এই জাল ছিঁড়ে বের হয়ে আসবার কথাই বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। প্রকৃতির সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই যা সম্ভব। আশা করি পরিবেশ সচেতনতা মানুষকে আরও বেশি করে যূথবদ্ধ হতে সাহায্য করবে এবং মানুষ একদিন এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসবে।

Post a Comment

1 Comments

  1. রক্তকরবী নাটকটি বহুবার পড়েছি। প্রিয় একটি নাটক। লেখাটা পড়ে নন্দিনী, রঞ্জন, বিশু, কিশোর, রাজা, গবেষক চরিত্র গুলো আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। ভোগবাদী মুনাফার দুনিয়ায় খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক লেখা।

    ReplyDelete
Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)