জি এম আনসার
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ঢাকুরিয়ার বাড়িতে পাঁচ ছয় বার গিয়েছিলাম। ছত্তিশগড়ে থাকি তখন। তখন মুঠো ফোন ছিল না আজকের মত। তবে চিঠি পত্রে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কলকাতায় ফিরলে বীরেন দার বাড়িতে যেতামই। অনেকগুলো কবিতা খামে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলতেন একসাথে। উনি সেগুলো বিভিন্ন পত্রিকায় পাঠাতেন। ডাক মারফৎ নিজের কবিতার বই ও অন্য পছন্দের বইপত্র পাঠাতেন।
শহীদ সাথী শঙ্কর গুহ নিয়োগীও কবিতা গল্প লিখতেন, ভালবাসতেন। ডানিটোলার জঙ্গলে বসে বহুদিন তৎকালিন বাংলা কবিতা প্রগতিশীল সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হত। বীরেন দা অনেক চিঠি পাঠিয়েছিলেন। অধিকাংশ হারিয়ে ফেলেছি। মনে আছে, ১৯৭৭ সালে ২রা জুন রাত্রিবেলা নিয়োগীকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। শ্রমিকরা ক্ষেপে গিয়ে বাধা দেয়। গুলি চলে। পরদিন সকালে ঘটনাস্থলে অনুসুয়া, সুদামা সহ কয়েকজনকে মৃত দেখতে পাই। কিছু পুলিশকেও শ্রমিকরা ঘেরাও করে রেখেছিল। ইতস্ততঃ ছড়ানো বেশ কিছু রাইফেল। রাজু নামে এক নেপালি শ্রমিকের হাতে মাইক। দাবি হল নিয়োগিকে ফিরিয়ে দাও। পুলিশ রাইফেল সব নিয়ে যাও। অন্যদিকে পুলিশের হাতে মাইক। কয়েক মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় বার গুলি চালিয়ে মোট ১১ জনকে মারা হয়েছিল।
ডানিটোলার জঙ্গলে সেই জায়গাটা পরে নিয়োগী আমাকে দেখিয়েছিল। ওকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল গাড়ি থেকে নেমে যাও। নিয়োগী রাজি হয়নি। এই এগারো জন শহিদের গুলিবিদ্ধ ছবি, একটা কবিতা ও কিছু লেখা আমি বীরেন দার হাতে দিয়েছিলাম। কবি সমীর রায় আমি ও পাগলা মেহের আলি নামের কবিতায় সেকথা উল্লেখ করেছিলেন। আমার ওই কবিতাটি বীরেন দা “আমরা যে গান গাই” তার সম্পাদনার সংকলনে রেখেছিলেন। সংকলনটির বেশ কিছু কপিও আমাকে দিয়েছিলেন। সম্ভবতঃ সমীর দা নিজে ছত্তিশগড়ে এসে দিয়েছিলেন কিন্ত আজ আর কোন কপি নেই। সব হারিয়েছি। কবিকে দেখেছি অভিভাবকের মতো উদ্বিগ্ন হতে। তার কবিতা আমাদের প্রেরনা ও বাঁচার রসদ যোগাবে। এই চিঠিটি পুরানো ফাইলের মধ্যে থেকে পেয়ে গেলাম। এটা একটা স্মৃতি। তিনি বেঁচে থাকুন হৃদয়ে।
0 Comments