গণসংহতি আন্দোলনের সাথে বিএনপির সংলাপ এবং আমাদের প্রগতিশীলরা, প্রসঙ্গ: বাংলাদেশের রাজনীতি


বিনয় সেন

আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলছে জোটগত মেরুকরণ। ক্ষমতার বাইরে থাকা বড় ধনীক শ্রেণির দল বিএনপি জোট গঠনের চেষ্টায় ছোট দলগুলোর সাথে সংলাপ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় "গণসংহতি আন্দোলন" নামে একটি দলের  সাথে বিএনপির সংলাপে আমাদের প্রগতিশীলদের অনেকেই নানাভাবে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করছেন। "গণসংহতি আন্দোলন" নিয়ে তাদের বিরূপ মন্তব্যের কারন এই দলটি আগে "বাম গণতান্ত্রিক জোট" নামক একটি প্রগতিশীল জোটে থেকে সাম্প্রতিক "রাজনৈতিক গণমঞ্চ" নামে নতুন আরেকটি রাজনৈতিক জোট তৈরি করে। এ নিয়ে তাদের আগের মিত্রদের সাথে কিছুটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়।মূলত এ থেকেই গণসংহতি আন্দোলনকে নিয়ে এই প্রগতিশীলদের বিরূপ মন্তব্য।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে "স্বাধীনতা"র পর থেকে আওয়ামী লীগের সাথেই নির্বাচনপন্থী বামপন্থী দলগুলোর সখ্যতা বেশি। এই নির্বাচনপন্থী বামদের নিয়ে গঠিত জোটেই ছিল গণসংহতি আন্দোলন। কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে তারা তাদের পুরাতন মিত্র ত্যাগ করে নতুন মিত্র বিএনপির সাথে সংলাপে বসছে।
এই সংলাপের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, পরিণতি, প্রস্তাবের বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিশ্লেষণ না করে এই বামপন্থী দলগুলোর কর্মী ও এই চেতনার ধারক-বাহকরা "গণসংহতি আন্দোলন" কেন বিএনপির সাথে সংলাপে গেল এই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। যেন গণসংহতি আন্দোলন নামে রাজনৈতিক দলটি কোথায় যাবে তা তারা নির্ধারন করে দিবে? এই চিন্তা সঠিক নয়। যার যেখানে ইচ্ছা যাওয়ার অধিকার আছে। জনগনই সব ঠিক করবে কে কোন পথে যাবে এবং কে কাকে বেছে নিবে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটে গণসংহতি থাকার পর সম্প্রতি তারা "গণতন্ত্র মঞ্চ" নামে অন্য একটি জোট গঠন করেছেন যেখানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। বিএনপির সাথেও আলাপেও তারা এসব তুলে ধরেছেন যা তাদের লিখিত বক্তব্য থেকে বুঝা যায়।

বাম গণতান্ত্রিক জোটে প্রো-লেফট "গণসংহতি আন্দোলন"এর এই অবস্থান নিয়ে যারা বিস্মিত, তাদেরকে রাজনীতির শিশু বলা যায়। এর কারণ, গণসংহতি আন্দোলনের অবস্থান যে এমনই হবে তা না বুঝার কোন কারণ ছিল না। গণসংহতি আন্দোলন কোন বিপ্লবী দল নয়, এটি একটি সংস্কারবাদী দল।নির্বাচনপন্থী বামপন্থী দলগুলো হয়ত এদের বিপ্লবী দল ভেবেছিল। কিন্তু "গণসংহতি আন্দোলন"এর  এজেন্ডা সমাজের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থার বদল নয়,ক্যাপিটালিজমের বিরুদ্ধে নয়,সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নয়। সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদের শিকলে আবদ্ধ হয়ে কিছু সাংবিধানিক সংস্কার করাই তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। তাদের ক্ষমতায় যেতে হলে কোন জোটের হাত ধরেই যে যেতে হবে তা তারা বুঝেন। বাংলাদেশে আওয়ামী-বিএনপির বাইরে সেই সম্ভাবনা এখনও তৈরি হয়নি যে কোন ছোট দল এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারবে। তাই জোট ছাড়া তাদের কোন উপায় নেই।

গণসংহতি যে রাজনীতি করছে তার প্রতিফলনই তাদের এই সংলাপ। অপরদিকে নির্বাচনপন্থী ছদ্ম-কমিউনিস্ট সিপিবি-বাসদের হয়েছে না ঘরকা না ঘাটকা! তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব চায় না আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে সরে যাক, এক্ষেত্রে তাদের মৌলবাদ নামক জুজুর ভয়। কিন্তু নিচের স্তরের আন্তরিক বিপ্লবীদের মাঝে আওয়ামী লীগ নিয়ে বিরূপ ধারনা বিদ্যমান থাকাতে তারা আওয়ামী লীগের সাথে না করতে পারছেন জোট না করতে পারছেন সরাসরি বিরোধিতা। এই অবস্থায় তাদের অবস্থান "হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবেন না।"

কিন্তু গণসংহতি ক্ষমতায় যেতে চায়, ক্ষমতায় গিয়ে তারা রাষ্ট্র সংস্কার করতে  চায়। এজন্য আওয়ামী লীগের সাথে জোট তাদের সম্ভব হবে না। তাই বিএনপির হাত ধরেই ক্ষমতায় স্বাদ ভোগ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।

গণসংহতি কেন বিএনপির সাথে সংলাপে গেল, এই আলোচনা অর্থহীন। আলোচনা করা উচিত বিএনপি কথা দিয়ে কথা রাখবে কিনা।আসলেই কি বিএনপি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করবে? নাকি এটা তাদের কৌশল? অতীতে বড় দুটি দল এমন অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার বাস্তবায়ন তারা করে নি। তাই বড় দলগুলো যে ছোট দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া করবে,তার নজিরও আছে। নৌকা মার্কা বামপন্থী ইনু-মেনন এর বড় প্রমাণ।
সেই ধারণা থেকে বলা যায়, গণসংহতি আন্দোলন  বিএনপির সাথে গেলে এবং বিএনপি জোট ক্ষমতায় গেলে গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি হয়ত মন্ত্রী হবেন কিন্তু জনগণের  প্রকৃত অর্থনৈতিক মুক্তি  কখনো হবে না। এর পিছনে যুক্তি না দিলে আমার বক্তব্য শুধু কথার কথা হয়ে থেকে যাবে।

গণসংহতি আন্দোলনের ৭ দফা প্রস্তাবনায় দেখা যায়,তারা রাষ্ট্র সংস্কার করবে। এই সংস্কারে তারা দেখিয়েছে নির্বাহী থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করবেন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা উন্নত করবেন, প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু করবেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনবেন। বিভিন্ন অধিদপ্তর ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে আইন করবেন। ঔপনিবেশিক বিভিন্ন আইন বাতিল করবেন।জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা চালু করবেন। এই হলো মোটাদাগে তাদের রাষ্ট্র সংস্কার।
তাদের একটি স্লোগান "পরিবর্তন চাই,পরিবর্তন সম্ভব"। তাদের পরিবর্তনের এই সংলাপে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনার এই অঙ্গীকারে কোথাও নেই যে,তারা ক্ষমতায় এসে জনগণের মধ্য যে চলমান রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক বৈষম্য তা দূর করতে পদক্ষেপ নিবেন। আমাদের আলোচনাটা করা দরকার সেখান থেকেই। বাকি আলোচনায় জনগণের কোন লাভ হবে না।

এটা সত্য যে,বর্তমান বিদ্যমান সিস্টেমে খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকারের বিষয়ে সর্বত্র রাষ্ট্রের মতাদর্শ অনুসারে বেসরকারিকরণ ও প্রাইভেটাইজেশন চলছে। খাদ্য উৎপাদনে আজ বীজ থেকে শুরু করে কীটনাশক পর্যন্ত সব খাতই সাম্রাজ্যবাদ-ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ-বাংলাদেশী বড় ধনিক শ্রেণির খপ্পরে। এই খপ্পরে পড়েই জনজীবন দিশেহারা। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা আজ হুমকীর মুখে। সাম্রাজ্যবাদী নীতি মেনেই কৃষিখাতে সরকারি ভর্তুকি ৪% এর বেশি দেওয়া যায় না। ফলে জনগন তার খাদ্যের যে মৌলিক অধিকার তা থেকে বঞ্চিত। গণসংহতি আন্দোলনের দাবির কোথাও নেই তারা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি কৃষিপন্যের জাতীয়করণ করবেন। তারা ক্ষমতায় আসলে কৃষিখাতে কী ভূমিকা নিবেন তারও উল্লেখ নেই এই সংস্কারে। তারা ক্ষমতায় এসে বিদেশী বীজ, সার, কীটনাশক নিষিদ্ধ করে এগুলোতে সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করবেন কিনা, তাও তাদের সংস্কারে কোথাও নেই।

"গণসংহতি আন্দোলন"এর সংলাপে কোথাও নেই, তারা ক্ষমতায় এসে চিকিৎসা খাতের সংস্কার করবেন। সেই লক্ষ্যে যা প্রথমেই প্রয়োজন সকল বেসরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতাল নিষিদ্ধ করা। তারা জনগণের এই মৌলিক অধিকার রক্ষা করবেন কিনা, এই প্রশ্ন তুলতে হবে। তারা কেন বিএনপির সাথে গেল, এসব স্থুল চিন্তা ও প্রশ্ন প্রগতিশীল মহলকে পরিহার করার কথা ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করি।

গণসংহতি আন্দোলন ক্ষমতায় এসে শিক্ষা খাতে বেসরকারিকরণ বন্ধ করবে কিনা তাও বলে নি। শিক্ষার ক্ষেত্রে যে ধনী-গরীব বৈষম্য তা দূর করবে কিনা, তা তাদের বক্তব্যে নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বৈষম্য চলছে তা হলো বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা। ইংলিশ মিডিয়াম, বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় এবং সকল প্রাইভেট স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়করণ করা। এটা করলে সব নাগরিকের শিক্ষা ক্ষেত্রে আপাত সমানাধিকার ও নাগরিকের শিক্ষা ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
সংবিধানে মৌলিক অধিকার নিশ্চিৎ করার কথা আছে। সব প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ আর প্রাইভেটাইজেশন করে এসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিৎ করা যায় না।

এছাড়া আরো বিষয় আছে যা আর আলোচনার প্রয়োজন নেই। এই ৩টি মৌলিক খাতে সংস্কার না হলে যতই প্রাদেশিক সিস্টেম, বিচার বিভাগ পৃথক আর রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য করা হউক না জনগণ যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই রয়ে যাবেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস অনেক সংস্কার এনেছে। কিন্তু দুর্নীতি-লুটপাট-পুলিশি নির্যাতন-ঠিকাদারি বন্ধ হয় নি। বাংলাদেশের সংবিধানেও অনেক সুন্দর সুন্দর কথা লেখা আছে কিন্তু সরকারগুলো তা মানে নি। অবিরাম তারা নিজেরাই তাদের সংবিধান লঙ্ঘন করে গেছে।

তাই গণসংহতি আন্দোলন নিয়ে প্রগতিশীলদের সমালোচনা গঠনমূলক হওয়া উচিত। গণসংহতি আন্দোলনকেও শুধু মুখে মুখে আমরা "মস্কোপন্থী নই,পিকিং পন্থী নই আমরা বাংলাদেশপন্থী" স্লোগান দিয়ে বিমূর্ত ভাবধারা সৃষ্টি করলে হবে না, প্রকৃত বাংলাদেশপন্থী মানে বাংলাদেশের জনগণপন্থী তারাই যারা জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক অধিকার নিশ্চিৎ করবে এবং সে লক্ষে সংবিধানে শুধু আর্টিকেলই আনবে না, তা বাস্তবায়ন করবে। তা না হলে এসব হবে বিমূর্ত স্লোগান।

পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে বিএনপির সমালোচনা মানেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষে নয়।যারা এমনটা বলেন তাদের চিন্তা আওয়ামী ফ্যাসিবাদেরই ভ্রুণ। আওয়ামী ফ্যাসিবাদও ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী বিরোধিতা মানেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা, আওয়ামী বিরোধিতা মানেই রাজাকার কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বা পাকিস্থানপন্থী বলে ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। যা তাদের ভিন্নমত দমনের একটি কৌশল। তাই বিএনপি বিরোধিতা মানেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষে নয়। এমন হলে তাও হবে ভিন্নমত দমনেরই নামান্তর।

গণসংহতি এদেশে অনেক নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাই তারা নির্বাচনপন্থী দল।নির্বাচনপন্থী হয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিৎ করা যায় কিনা, তা অতীত ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বলাবাহুল্য যেসব ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার সংস্কারের কথা বললাম সেসব নিশ্চিৎ করা গণসংহতি কেন এদেশের নির্বাচনপন্থী ছদ্ম-কমিউনিস্ট সিপিবি-বাসদসহ কোন দলের দ্বারাই সম্ভব নয় বলে হয়। বাকি বিচার জনগণের উপর রইল।

এর বাইরে এসে যারা বিপ্লবের কথা বলেন, যারা এদেশে সকল সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারনবাদী-আমলা-মুৎসুদ্দি বড় ধনীক শ্রেণির শোষনের অবসান চান এবং কেবলমাত্র সেই লক্ষে কাজ করেন, তারাই জনগণের প্রকৃত মুক্তির জন্য লড়ছেন। তাদের দ্বারাই কেবল গণমুক্তি সম্ভব।

প্রশ্ন হলো, তাহলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে কীভাবে উচ্ছেদ করা যাবে? এখানেই মূল পার্থক্য। এখানেই দুই নীতি, দুই কৌশল।

গণসংহতি আন্দোলনের নীতি হলো রাষ্ট্র সংস্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে কিছু সংস্কার করে বুর্জোয়াশ্রেণির নেতৃত্বে এই সিস্টেমটাকেই রক্ষা করা।অন্যদিকে নির্বাচনবিমুখ বিপ্লবীদের নীতি হল আমলা-মুৎসুদ্দি বড় ধনীক শ্রেণির শাসন উচ্ছেদ করে সর্বহারাশ্রেণির নেতৃত্বে সর্বহারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।

এই নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন, এটাতো দীর্ঘস্থায়ী ব্যাপার? আওয়ামী ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদে আশু পদক্ষেপ কী? এ নিয়ে যেসব আলোচনা হয় সেইসব আলোচনায় মূলত শ্রমিক-কৃষকের কথা আসে না। এদেশের শ্রমিক-কৃষক এই পুঁজিবাদী সিস্টেমের ভয়াল শিকার। এ থেকে তারা মুক্তি চায়। একাত্তর সালে ভেবেছিল মুক্তি আসবে। আসে নি। একাত্তরে মুক্তি এসেছিল বাঙালী বড় ধনীক শ্রেণির। বাইশ পরিবার ছাপিয়ে এখন ২২ লক্ষ পরিবার হয়েছে কিন্তু শ্রমিক-কৃষক জনগণের ভাগ্যের মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। তাই রাষ্ট্র সংস্কারও জনগণের কোন কর্মসূচি নয়। শ্রমিক-কৃষকের সাথে আলাপেই তা আরো স্পষ্ট হবে। শ্রমিক-কৃষকের রাজনীতির সাথে একাত্ম হয়েই এই কথার সারমর্ম অনুধাবন করা যাবে। মধ্যবিত্ত পেটিবুর্জোয়াদের একটি অংশ এই রাষ্ট্র সংস্কার চায় কারণ এতে তাদের মুক্তি হয়ত ঘটতে পারে কিন্তু শ্রমিক-কৃষকের মুক্তি ঘটবে না।

বিপ্লবীরা এদেশের শুধু শ্রমিকশ্রেণির মুক্তি নয়, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক সকল শক্তির মুক্তি চায়। সেই লক্ষেই তাদের রাজনীতি। সেই লক্ষেই তাদের ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদের রাজনীতি। শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির মাধ্যমেই অপরাপর শ্রেণিগুলোর মুক্তি সম্ভব।

গণসংহতি আন্দোলনের ইচ্ছা অনেক। তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী আইনও আনতে চায়, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করা তাদের দ্বারা সম্ভব হবে না। এটা করলে তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। তাছাড়া আরেক আমলা-মুৎসুদ্দি বড় ধনীক শ্রেণির দল বিএনপি থাকায় তা অসম্ভব। তাই এসব শুধু কথার কথা হিসেবেই থেকে যেতে বাধ্য।

অপরদিকে বিপ্লবীরা ঘোষনা দিয়েই জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল আইন বাতিল করবে বলে তাদের গঠনতন্ত্রে রেখেছে। তাই বিপ্লবীরা তাদের নীতি অনুযায়ী আওয়ামী ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদ করে যে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে চায়, তা সরাসরিই বলে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মূল খুঁটি ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। তাই ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা মানে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা। গণসংহতি আন্দোলনের কোথাও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা নেই।

অন্য কোন আমলা-মুৎসুদ্দি বড় ধনীক শ্রেণির ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি নয় বরং ফ্যাসিবাদের বিরোধিতার জন্য প্রয়োজন সর্বহারাশ্রেণির নেতৃত্বে সকল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এই আন্দোলন যত জোরদার হবে,ততই ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদের আন্দোলন এগিয়ে যাবে। এটাই জনগণের মুক্তির পথ। তাই অযথা সমালোচনা নয়, প্রকৃত গঠনমূলক সমালোচনার জন্য জনগণকে সেই লক্ষে সংগঠিত করতে হবে।

কেবলমাত্র এবং কেবলমাত্র সেই নিরিখেই আমরা ধর্মীয়সহ সকল রাজনৈতিক দল কে বা কারা জনগনের পক্ষে, তা আমরা নিশ্চিৎ করতে পারি। এটাই হলো গনপক্ষ নির্ধারনের প্রকৃত মাপকাঠি।

ভারতেও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তি বিজেপির ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করছে, সেই লক্ষে তারা আঞ্চলিক বা জাতীয় আমলা-মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া দলগুলোর সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে ক্ষমতায় যাওয়ার কথা বলে না। তারা জনগণকে ধোঁকা দিতে চায় না, জনগণকে প্রতারিত করতে চায় না, জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিতে চায় না, জনগণের পশ্চাৎপদ চিন্তার লেজুড়বৃত্তিও করতে চায় না।  বুর্জোয়া ক্ষমতার ভাগাভাগি না করেও যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যায়, ভারতের বিপ্লবী দলগুলো তার বড় প্রমাণ। আমাদেরকেও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে।

লেখকঃ  অনলাইন এক্টিভিস্ট, বাংলাদেশ

আরো আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো করুন।

Post a Comment

1 Comments

  1. সংবিধানটি আরেকবার পড়ে দেখুন। আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন।

    কথাগুলো খুবই পুরাতন ও একঘেয়ে।

    ReplyDelete
Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)